বেইরুট: বাইরে গোলাগুলির শব্দ অভ্যেস হয়ে গেছে কবেই। নিশ্চিন্তে নিজেদের ঘরে ভাইবোনদের সঙ্গে খেলা করছিল সে। কিংবা ঘুমোচ্ছিল। কিংবা পড়তে বসেছিল। কী করছিল কে জানে। আচমকা মাথার ওপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বাড়িটা। আলেপ্পোর কার্পেট বম্বিংয়ের আর এক শিকার। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে ছোট্ট ছেলেটাকে কোনওক্রমে টেনে হিঁচড়ে বের করা হল ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে শৈশবের দুনিয়াটা হারিয়ে ফেলেছে সে। বদলে এসেছে ভয়, আতঙ্ক আর আচমকা মৃত্যুর বরফঠান্ডা ছোঁয়া পাওয়ার স্তম্ভিত বিস্ময়। ৫ বছরের ওমরান দাকনিশ এভাবেই হয়ে উঠেছে ছিন্নভিন্ন সিরিয়ার বিধ্বস্ত প্রতীক। তুরস্কের সমুদ্রতটে ভেসে আসা ৩ বছরের আয়লান কুর্দির পর গৃহযুদ্ধে ছিন্নভিন্ন দেশের নবতম মুখ।


বসে আছে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটা কমলালেবু রঙের বড়সড় চেয়ারে। মাথা ধুলোয় মাখামাখি। মুখের একপাশ রক্তে ঢাকা। কচি হাত তুলে চেষ্টা করছে রক্তটা মোছার। তারপর হাত মুছে ফেলল নিজের চেয়ারে। চোখে জল নেই, গলায় আতঙ্কিত চিৎকার নেই। শুধু ভয়ার্ত বিস্ময়। আচমকা এ কী হল তার সঙ্গে, তাদের সঙ্গে।

জানা গেছে, বুধবার রাতে বম্বিংয়ের পর ওমরানদের উদ্ধারের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুরোপুরি ভেঙে পড়ে তাদের বাড়িটা। ওমরান, তার ৩ ভাইবোন ও বাবা মাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। মাথায় আঘাত লাগলেও মস্তিষ্কে চোট পায়নি সে, পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। তবে যে বহুতলের বাসিন্দা ছিল ওমরানরা, তার ধ্বংসস্তুপ থেকে ৮জনের দেহ উদ্ধার হয়, মৃতদের মধ্যে ৫টি শিশু। বুধবার সন্ধেয় নামাজ পাঠ চলাকালীন এই হামলা চলে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।

ওমরানের ৩ ভাইবোনের বয়স ১, ৬ ও ১১। তাদের কারওই তেমন গুরুতর শারীরিক চোট লাগেনি, বিপন্মুক্ত তাদের বাবা মাও। কিন্তু মৃত্যুর স্পর্শ থাকা ওই এক ঘণ্টা ওরমান ও তার ভাইবোনদের জীবনে যে ভয়াবহ ক্ষত তৈরি করে গেল, তা আদৌ কখনও সারবে কি?