ইসলামাবাদ:  সীমান্তের ওপ্রান্তে গোটা পাকিস্তান এখন সাত বছরের জৈনাবকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় ফুঁসছে। পাকিস্তানের সর্বস্তরের মানুষ দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার।


এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, যেকোনও জায়গায় মেয়েদের নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্নের মুখে। তাই প্রতিবাদ স্বরূপ, পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম সামা টিভির সঞ্চালিকা কিরণ নাজ তাঁর বুলেটিন পড়লেন নিজের ছোট বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে। এমনকি বুলেটিনের শুরুতে কিরণ বলেন, আজ তিনি একজন সংবাদপাঠিকা নন, একজন মা হিসেবে খবর পড়তে বসেছেন। আর সাত বছরের মেয়ের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড দেখে তিনি এতটাই আতঙ্কিত যে মেয়েকে বাড়িতে একলা রেখে কাজে আসতেও তিনি ভয় পাচ্ছেন। তাই তাঁকে সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছেন কিরণ।





নাজের দেড় মিনিটের বুলেটিন চোখে জল এনে দেয়। সত্যিই ছোট্ট কফিনের ভার অনেক বেশি। সেই ভারে ভারাক্রান্ত গোটা দেশ, বলা ভাল গোটা দুনিয়া। এমনকি  সাত বছরের মেয়েটির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাকিস্তান যে সেখানকার পঞ্জাব প্রদেশে প্রতিবাদ চলাকালে পুলিশের গুলিতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হয় বুধবার।

 




ভারত সীমান্ত থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত কসুর শহরটি। সেখানেই গত ৪ জানুয়ারি টিউশন থেকে ফেরার সময় নিখোঁজ হয় যায় সাত বছরের জৈনাব। সেই সময় মেয়েটির বাবা-মা হজ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মেয়েটি একটি অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছেন। ৮ জানুয়ারি মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয় জঞ্জাল থেকে। দেহের ময়নাতদন্ত করে জানা যায়, মেয়েটিকে মারার আগে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছিল। এই কথা উল্লেখ করে সঞ্চালিকা কিরণ বলেন, সৌদি আরবে যখন মেয়েটির বাবা-মা তাঁদের সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনা করছেন, খেলনা কিনছেন, তখন কোনও এক দানব তাঁর লালসা চরিতার্থ করতে তাকে ছিঁড়ে খেয়ে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে দিয়েছিল জঞ্জালে। এটা কোনও শিশুর ধর্ষণ ও হত্যা নয়, এই ঘটনায় খুন করা হয়েছে গোটা সমাজকে, মন্তব্য কিরণের।

তিনি আরও বলেন, গোটা ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হবে, কমিশন বসবে, কিন্তু সত্যি এটাই বিচারের দিনে ভগবানকে এই মেয়েটিই প্রশ্ন করবে, তার কী দোষ, কেন তাকে হত্যা করা হল?  বুধবারই দেশে ফিরেছে মেয়েটির বাবা। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়ের দেহ সমাধিস্থ করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। সঞ্চালিকা মনে করেন, এখানে কোনও একটি মেয়ের মৃত্যু হয়নি, গোটা মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়েছে।





প্রসঙ্গত, কসুর শহরে এই নিয়ে গত একবছরে এধরনের ১২টি হত্যার ঘটনা ঘটল। এর আগে ২০১৫ সালে কসুর খবরের শিরোনামে আসে, কারণ সেখানে একটি শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। যারা প্রায় ২৮০ জন শিশুকে অপহরণ করে যৌন হেনস্থা চালিয়েছে ও ভিডিও রেকর্ডিং করেছে। তারপর আক্রান্তদের পরিবারের থেকে সেই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রচুর টাকা রোজগার করেছে।