নয়াদিল্লি: বর্তমানে শহুরে জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে পানশালা সংস্কৃতি। ছুটির দিন হোক বা অবসরে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পানশালায় আড্ডা জমানো রীতিমতো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই সংস্কৃতির আমদানি বিগত কয়েক বছরে হয়নি, প্রাচীনকালেও পানশালা সংস্কৃতি ছিল বলে খোঁজ পেলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা (Sumearian Civilisation Pub Discovered)। 


পশ্চিমি দেশে নয়, ইরাকের বুকে (Ancient Pub in Iraq), মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়া এমনই প্রাচীন পানশালার হদিশ পেলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। বিশ্বের প্রাচীনতম শহরের জীবনযাত্রা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। তাতেই উঠে এল প্রমাণ।  ইরাকের অধুনা শহর নাসিরিয়ায় খননকার্য চলছিল। তাতে উত্তরপূর্বের হারিয়ে যাওয়া শহর লেগাশের ধ্বংসাস্তূপ খুঁড়ে মিলল প্রাচীনতম পানশালার। আমেরিকা এবং ইতালির প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই আবিষ্কার করলেন। 


প্রাচীন ইরাকের সুমেরীয় সভ্যতার অন্যতম উল্লেখযোগ্য শহর ছিল লেগাশ। সেখানেই ওই পানশালার হদিশ মিলেছে, যার বয়স প্রায় ৫ হাজার বছর বলে ধারণা প্রত্নতত্ত্ববিদদের।  ওই পানশালায় প্রাথমিক পর্যায়ের হিমায়ন প্রযুক্তি বা রেফ্রিজারেশন সিস্টেম, বৃহদাকার উনুন, বেঞ্চ এবং প্রায় ১৫০টি থালা-বাটি উদ্ধার হয়েছে। 


শুধু তাই নয়, থাল-বাটির মধ্যে থাকা মাছ এবং মাংসের হাড়ের নমুনাও মিলেছে। পানীয় হিসেবে বিয়ার পানের লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভ্যানিয়া এবং ইউনিভার্সিটি অফ পিসার গবেষকরা।  সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে গবেষক হোলি পিটম্যান জানিয়েছেন, শুধু হিমায়ন প্রযুক্তি, থালা-বাটি নয়, যে বেঞ্চে বসে মানুষজন পান করতে যেতেন, তারও খোঁজ মিলেছে। তাই সুমেরীয় সভ্যতাতেও পানশালা সংস্কৃতি ছিল বলে মত তাঁদের। 


তবে নিছক পানশালা নয়, নয়া আবিষ্কারকে সরাইখানা বলার পক্ষপাতী গবেষকরা। তাঁদের দাবি, বিয়ার পানের সংস্কৃতি প্রাচীন যুগেও ছিল। এমনকি জলের চেয়ে বিয়ারের অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। এমনকি স্থানীয় এক ধর্মস্থানের ধ্বংসাবশেষের গায়ে বিয়ারের রেসিপি-ও খোদাই থাকতে দেখতে পেয়েছেন তাঁরা। 


টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর সঙ্গমস্থলের অদূরে অবস্থিত ছিল লেগাশ। শহর। উর্বর মাটির জন্য ওই এলাকাকে প্রাচীন কালে ‘ঈশ্বরের বাগিচা’ বলেও উল্লেখ করতেন সেই যুগের মানুষ।কৃষিকাজ, খামার, মৎস্যচাষ ছিল প্রধান জীবিকা। প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথার। 


খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০-র আশেপাশে ওই সরাইখানায় মানুষের আনাগোনা ছিল বলে মত গবেষকদের। তার উপর নির্ভর করেই প্রাচীনতম শহরগুলি গড়ে ওঠে বলে মত তাঁদের। আরও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে ওই জায়গা থেকে। নভেম্বরের মধ্যে সেই কাজ সম্পন্ন হলে আরও বিশদ তথ্য উঠে আসবে বলে আশাবাদী সকলে।