ঢাকা: সন্ত্রাসবাদের একক বিপদের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হল সুষমা স্বরাজের।

চতুর্থ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের অঙ্গ হিসাবে বৈঠকের পর বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমরা উভয়েই আমাদের সমাজকে হিংসা, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও সন্ত্রাসবাদী আদর্শের বিপদ থেকে রক্ষা করতে দায়বদ্ধ। সন্ত্রাস বিন্দুমাত্র সহ্য না করার নীতি ও সর্বস্তরে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়তে একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলব আমরা। বর্তমানে যেসব বিপদের মোকাবিলা দুদেশকেই করতে হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনই এক চ্যালেঞ্জ হল সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা ও মৌলবাদ। আমরা একসঙ্গে ও সমমনোভাবাপন্ন দেশগুলিকে পাশে নিয়ে এই অভিশাপের বিরুদ্ধে লড়াই বহাল রাখব।

দুদিনের সফরে আসা সুষমা এও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত শরিক ভারত। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে মোট ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার তিন রকমের ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের যে কোনও দেশকে উন্নয়ন খাতে ভারতের দেওয়া এটাই সর্বোচ্চ সহায়তা। বাংলাদেশের নানা ক্ষুদ্র সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রকল্পেও অনুদান দিয়ে সাহায্য করছে ভারত। গত তিন বছরে এ ধরনের ২৪টি অনুদানমূলক প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়েছে, বর্তমানে এমন ৫৮টি প্রকল্প চলছে বলে জানান সুষমা।

তিনি বলেন, ভারত এখন বাংলাদেশের মানুষকে ৬৬০ মেগাওয়াট বহুদিনের কাঙ্খিত বিদ্যুত্ সরবরাহ করছে। নিকট ভবিষ্যতে এই বিদ্যুতের পরিমাণ বেড়ে তিনগুণ না হলেও দ্বিগুণ হবেই। আমরা আন্তর্জাতিক সৌর জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবেও একযোগে কাজ করব। এর ফলে সৌরশক্তি সুলভ হয়ে উঠতে পারে।

ইতিমধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশ একটি পেট্রলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণেও সহমত হয়েছে। উত্তরপূর্ব বাংলাদেশের মানুষের সুবিধার্থে এই প্রকল্পের ফলে শিলিগুড়ির সঙ্গে যুক্ত হবে পার্বতীপুর। এলপিজি টার্মিনাল গঠন, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ও এই সেক্টরে বিনিয়োগের বিষয়গুলিও বিবেচনাধীন বলে জানান তিনি।

মায়ানমারের রাখাইনে হিংসা মাথাচাড়া দেওয়ায় ভারত 'গভীর উদ্বিগ্ন' বলেও জানান সুষমা। রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের অভিযোগে আলোড়নের মধ্যেই সুষমা বলেন, আমরা সেখানকার বাসিন্দাদের মঙ্গলের কথা মাথায় রেখে ধৈর্য্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার আবেদন করেছি। সুষমা যদিও সরাসরি 'রোহিঙ্গা' কথাটা উল্লেখ করেননি।

রাখাইনে সন্ত্রাসবাদ দমনে মায়ানমার সেনার অভিযানে প্রায় ৬ লক্ষ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের দেশের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। তাদের বিচারে রোহিঙ্গারা বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

বাংলাদেশ চায়, ভারত লাগাতার মায়ানমারের ওপর এ ব্যাপারে চাপ দিক। সেই প্রেক্ষাপটে সুষমা বলেন, রাখাইন থেকে উত্খাত হওয়া লোকজন ফিরে এলেই একমাত্র স্বাভাবিকতা পুনর্বহাল হতে পারে, এটা পরিষ্কার। রাখাইনে দ্রুত সামাজিক-আর্থিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়ন চাই। সেটাই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।