বেজিং: প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের বেজিং-সফরের দিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সরবরাহ চুক্তি ভারত স্বাক্ষর করায় অসন্তোষ প্রকাশ করল চিন। এদিন চিনা সরকার-পরিচালিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতকে কটাক্ষ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত কেবল নিজের সৌন্দর্য্যের প্রশংসা শুনতে চায়।

এদিন ওই প্রতিবেদনে চিন ও ভারতের মধ্যে যে বৈপরীত্য রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, চিরাচরিত একে অপরের প্রতি অনাস্থা, ভারত-মার্কিন জোট জল্পনা – সবমিলিয়ে দুই সুপারপাওয়ার (চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)-দের মধ্যে পালা করে ঝুঁকে পড়ার একটা অভ্যাস রয়েছে ভারতের।

ভারতকে কটাক্ষ করে চিনা সংবাদমাধ্যম লিখেছে, (ভারতের) মূল উদ্দেশ্য হল নিজেকে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হিসেবে প্রতিপন্ন করা, যাতে বিশ্বের দুই সর্বশক্তিমান পুরুষ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিন) সর্বদা তার প্রশংসা করে বেড়ায়। আরও বলা হয়েছে, এটা ভারতের কাছ থেকে একেবারে অনভিপ্রেত নয়। এর আগেও ভারত এমন ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রসঙ্গে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলা চোরাস্রোতকে ভারত যেভাবে সামাল দিয়েছিল, সেই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশটন কার্টার ভারত সফরে এসে লজিস্টিক্স সাপোর্ট এগ্রিমেন্ট (এলএসএ) সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল একে অপরের সামরিক ঘাঁটির ব্যবহার করা। একইসঙ্গে, সামরিক সরঞ্জাম ও যানের জ্বালানি ভরা থেকে শুরু করে মেরামত—সবই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারত-মার্কিন প্রশাসনের এই চুক্তিকে তাই বেজিং-বিরোধী বলে মনে করছে চিন। আর তা প্রতিফলিত হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে দক্ষিণ চিন সাগরে যৌথ নজরদারি চালাতে ভারতকে অনুরোধ করেছিল ওয়াশিংটন। যদিও, নয়াদিল্লি সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। প্রতিবেদনে সেই বিষয়টিও উল্লীখিত হয়। সেইসঙ্গে, প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, চিনকে ক্ষিপ্ত করার চেষ্টা না করাই ভাল!

এদিকে, এসবরে মধ্যেই এদিন চিন সফরে গেলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর। প্রথমদিন তিনি চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল চ্যাং ওয়ানকুয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, বৈঠকে পর্রীকর আশ্বাস দেন, চিনকে যথেষ্ট গুরত্ব দেয় ভারত। তিনি বলেন, চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে ভারত অগ্রাধিকার দেয়।

ভারতের উদ্দেশ্যে চ্যাংও জানান, তিনি দু দেশের সামরিক সম্পর্কের উন্নতির আশা করেন। সফরে চ্যাংয়ের অগ্রজ তথা পিপলস লিবারেশন আর্মির নীতি-নির্ধারণকারী সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন (সিএমসি)-র সহ-সভাপতি জেনারেল ফান চাংলং এবং চিনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন পর্রীকর।