তাসখন্দ ও সোল: পরমাণু সরবরাহকারী রাষ্ট্রের গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একদিকে এদিন যেখানে সোলে প্রস্তুতি তুঙ্গে, সেখানে পাকিস্তানের মুখে শোনা গেল ‘হুঁশিয়ারি’। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতে, ভারতের জন্য যদি নিয়ম ‘শিথিল’ করা হয়, তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতাবস্থায় প্রভাব ফেলবে।


সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বৈঠকে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে এসসিও গোষ্ঠীতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু, ভারতের নজর এনএসজি-তে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে এদিন থেকে বসছে এই গোষ্ঠীর বার্ষিক প্লেনারি। সূত্রের খবর, সেখানে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ঝড় উঠবে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। একদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বহু রাষ্ট্র যেখানে এই এলিট গোষ্ঠীতে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত কারার ডাক দিয়েছে, সেখানে নিয়মের প্রতিবন্ধকতা তুলে ভারতকে রোখার চেষ্টা করছে চিন।

এই পরিস্থিতেই এদিন তাসখন্দে এসসিও বৈঠকের আগে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনফিংয়ের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎ করেন মোদী। সূত্রের খবর, বেজিং যাতে ভারতকে এনএসজি-তে সমর্থন করে, তার জন্য জিনফিংয়ের সমর্থন চান মোদী। মোদী জানান, বিশ্বে ভারতকে নিয়ে যে বিপুল সমর্থনের আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে, তাকে মান্যতা দেওয়া উচিত বেজিংয়ের।

ঠিক এই সময়ে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি শোনা গেল পাকিস্তানের গলায়। এসসিও বৈঠকে অংশ নিতে তাসখন্দে রয়েছেন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন। সেখানে তিনি চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, জিনফিংকে পাক প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যদি বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে উপমহাদেশীয় অঞ্চলের সার্বিক স্থিতাবস্থায় প্রভাব পড়বে।

পাশাপাশি, বর্তমানে ৪৮ সদস্যরাষ্ট্রের এনএসজি-তে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির জন্যও চিনা প্রেসিডেন্টের সামনে জোরালো সওয়াল করেন মামনুন। তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে পরমাণু নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি করা হয়েছে। পাশাপাশি, পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশের হাতে পৌঁছানো থেকে রক্ষা করতেও তৎপর হয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তান যখন তাসখন্দে বসে এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি রোখার সর্বান্ত চেষ্টা করছে, তখন সেখান থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ কোরিয়ার সোলে ভারতের হয়ে জোর সওয়াল করতে হাজির হয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। ৪৮ দেশের প্রায় ৩০০ জন প্রতিনিধি এই প্লেনারিতে অংশগ্রহণ করছে।

প্রথমে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে আলোচ্য সূচিতে রাখাই হয়নি। কারণ, ভারত পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করেনি, যা এনএসজি গোষ্ঠীতে ঢোকার পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু, প্লেনারির উদ্বোধনী বৈঠকে ভারতের হয়ে সওয়াল করে জাপান সহ বেশ কিছু দেশ। যার পরই পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। শোনা যাচ্ছে, এদিন নৈশভোজের পর সদস্য রাষ্ট্রগুলি ভারতের ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিশেষ বৈঠকের ডাক দিয়েছে। সেখানে ভারতের হয়ে জোর সওয়াল করবেন জয়শঙ্কর।

সূত্রের খবর, এনএসজি-র প্রায় ২০ সদস্য রাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন করতে রাজি। আরও কিছু দেশ হয়ত দিয়ে দেবে। তবে, সমস্যা অন্যত্র। চিন সহ কিছু দেশ এখনও ভারতের প্রবেশের বিরোধিতা করছে। এনএসজি-র সংবিধান অনুযায়ী, যে কোনও সিদ্ধান্ত ঐকমত্যে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বাকি রাষ্ট্রগুলি যতক্ষণ না সমর্থন দিচ্ছে, ততক্ষণ ভারতকে অপেক্ষা করতে হতে পারে।