নয়াদিল্লি: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। ইউক্রেনে-রাশিয়ার যুদ্ধের সময় অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন অবৈধভাবে মানুষ এবং শিশু ইউক্রেন থেকে রাশিয়াতে পাচার করা হয়েছে।
পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি: আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত জানিয়েছে, শিশুদের এক দেশে থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়ার এই কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন পুতিন। পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গেও এই কাজে সামিল হয়েছেন। রাশিয়ার শিশু অধিকার কমিশনার লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যদিও রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেছেন গ্রেফতারি পরোয়ানা অর্থহীন। মারিয়া জাখারোভা জানান, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের এই সিদ্ধান্ত আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমাদের দেশের জন্য কোনও অর্থহীন। কারণ গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করার ক্ষমতা নেই। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে এমন দেশেই নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে সংশ্লিষ্ট আদালত।
অতিমারির ভয়াবহতা সবেমাত্র শিথিল হয়েছিল। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় ছিল গোটা বিশ্ব। আর সেই আবহেই নেমে এসেছিল যুদ্ধের খাঁড়া। কিন্তু তার পর এক বছর কেটে গেলেও, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি পড়েনি এখনও। বরং যত সময় এগোচ্ছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতির পারদ চড়ছে ততই। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযানের ডাক দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার তার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। আর এই এক বছরে, শুধুমাত্র রাশিয়া এবং ইউক্রেন নয়, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে গোটা বিশ্ব। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, তেল, এমনকি খাদ্যসঙ্কট পর্যন্ত দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতির নিষেধাজ্ঞা চাপায় রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইউরোপে। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এই মুহূর্তে সুতোয় আটকে রয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও ইউক্রেন সরকারের দাবি, তাদের দেশেই কমপক্ষে ১ লক্ষ নিরীহ নাগরিক রুশ হামলায় মারা গিয়েছেন। দুই দেশ মিলিয়ে সংখ্যাটা ঢের বেশি বলে মত আন্তর্জাতিক মহলের।রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের দাবি, নিরীহ নাগরিক যত জন মারা গিয়েছে, তার মধ্যে পুরুষের হার ৬১.১ শতাংশ, মহিলার হার ৩৯.৯ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১ হাজার শিশু। পাশাপাশি যৌন নিগ্রহ, অত্যাচারের ঘটনাও সামনে এসেছে ভুরি ভুরি। ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ, প্রায় ১২ কোটি মানুষ মানবিক সঙ্কটে রয়েছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দুই দেশের কমপক্ষে ২ লক্ষ ৫০ হাজার সৈনিক মারা গিয়েছেন বলে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। আমেরিকার দাবি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দুই দেশেরই ১ লক্ষ ২০ হাজার করে সৈনিক মারা গিয়েছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়েছেন।দলে দলে সাধারণ নাগরিকরা ইউক্রেন ছেড়েছেন। গত বছর মে মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে পরিসংখ্যান দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী, প্রায় ৮০ লক্ষ ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। এই যুদ্ধ কার্যতই গোটা বিশ্বকে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে। রাশিয়ার পাশে রয়েছে তুরস্ক, চিন, ইরানের মতো দেশ। সামরিক সাহায্য জোগাচ্ছে চিন এবং ইরান। কাস্পিয়ান সাগর হয়ে পণ্য সরবরাহে সহযোগিতা করছে তুরস্ক। অন্য দিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আবার আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশ পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের।