কুন্তল চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা: সতীর একান্ন  পীঠের মধ্যে কয়েকটি রয়েছে বাংলাদেশেও। যার মধ্যে অন্যতম মা যশোরেশ্বরী। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার ঈশ্বরীপুরে মা যশোরেশ্বরীর মন্দির। এখানে পীঠ-ভৈরবের নাম চণ্ড। ৫০০ বছরেরও পুরনো এই মন্দিরে মা কালীর পুজো ঘিরে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান সব ধর্মের মানুষ। কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ সফরের সময় যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। 


শোনা যায়, মূল মন্দিরটি নতুন রূপ পায় রাজা প্রতাপাদিত্যের হাতে। কথিত আছে, গৌড় থেকে এসে এই অঞ্চলেই ইছামতী ও যমুনার সঙ্গমস্থলে রাজধানী স্থাপন করতে চান রাজা প্রতাপাদিত্য। রাজধানী নির্মাণের জন্য বন জঙ্গল সাফ করাচ্ছিলেন রাজা। এমন সময় এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হন কামালউদ্দিন নামে তাঁর এক কর্মচারী। কামালউদ্দিন দেখেন, ঝোপের আড়ালে জ্যোতির্ময় আলোক ছটা।



 


সেখান থেকে বের হচ্ছে ধোঁয়া। ঘটনার কথা রাজাকে জানান তিনি। জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে রাজা দেখেন, এক পরিত্যক্ত মন্দির ও এক প্রস্তরখণ্ড। পাথরের খণ্ডটি অনেকটা হাতের তালুর মতো দেখতে। পাশেই পড়ে রয়েছে টাটকা জবা ফুল। তখনই সেই স্থানে দেবমাহাত্ম্য অনুভব করেন তিনি। তাঁরই উদ্যোগে নতুন করে তৈরি হয় মন্দির। জায়গার নাম রাখেন যশোরেশ্বরী পুরী। আর সেই নাম থেকেই দেবীর নাম যশোরেশ্বরী। 


 জনশ্রুতি, শুধু মন্দির নির্মাণ নয়। তৎকালীন সমাজে সৌহার্দ্যের বার্তাও দেন রাজা প্রতাপাদিত্য। মন্দিরের অদূরে নির্মাণ করান একটি মসজিদ ও একটি গীর্জা। মসজিদটির নাম টেঙ্গা মসজিদ। টেঙ্গা শব্দের অর্থ যুদ্ধ শিবির। মসজিদটি উৎসর্গ করেন তাঁর কর্মচারী কামালউদ্দিনের উদ্দেশে, যিনি প্রথম দেবীস্থানে অলৌকিক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।


সময়ের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে পারেনি এই মন্দির। মুঘলরা প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করে এই রাজ্যের দখল নিলে যশোরেশ্বরী মন্দিরে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চলে। রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জনবসতিহীন হয়ে পড়ে এই এলাকা। প্রায় দেড়শো বছর পর, এই মন্দিরের পুরোহিত ও সেবায়েতদের বংশধররাই নতুনভাবে মন্দিরের সংস্কার করেন। 

একটা সময় ছিল, যখন কালী পুজোর দিনগুলোতে গমগম করত যশোরেশ্বরীর মন্দির। অবিভক্ত বাংলাদেশের দূর দূরান্ত থেকে জমিদাররা আসতেন পুজো দেখতে। পুজোর ক’দিন কাটাতেন এখানেই। এখন রোজ পুজো না হলেও কালীপুজোয় ভক্ত সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর। এখন এই মন্দির দেশের একটি অন্যতম পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ।

আরও পড়ুন :
 বিশ্বাস, কঙ্কালীতলায় কুণ্ডের ঈশাণ কোণে দেবী সতীর কাঁখাল নিমজ্জিত !