মস্কো:  ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ, অনলাইন এই মারণ খেলা এখন তরুণ প্রজন্ম, তাঁদের মা-বাবা, এমনকি বহু রাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে গেছে। কারণ এই খেলার শেষই হচ্ছে আত্মহত্যা দিয়ে। যারা এই খেলার নেশায় মাতছে, তাদের দাবি, একবার শুরু করলে, এই খেলা থেকে বেরিয়ে আসার কোনও পথই খোলা থাকছে না। গতকালই এই গেমের অন্যতম অ্যাডমিন সতেরোর এক রুশ কিশোরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই মেয়েটির বাড়ি থেকে মারণ খেলার সঙ্গে যুক্ত বহু জিনিষ উদ্ধার করেছে রুশ পুলিশ। জানা গিয়েছে মেয়েটিই এই খেলার চ্যালেঞ্জ নেওয়া বহু তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীকে খেলা ছাড়লে খুনের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। মেয়েটি নিজেও একসময় ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, তবে সে নিজে আত্মহত্যা করেনি। উল্টে গেমের অ্যাডমিন হয়ে গেছে।

এই খেলার অ্যাডমিন পেজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে রুশ পুলিশ। তবে একুশ বছরের তরুণ ফিলিপ বুডেকিন হল এই গেমের নেপথ্যে আসল মস্তিষ্ক। ফিলিপ এই মারণ খেলা প্রথম আবিষ্কার করে। তার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজকে দূষণমুক্ত করা। তাই এই গেমের আবির্ভাব।

ফিলিপ এখন গারদের পিছনে হলেও, বিভন্ন নামে এখনও এই গেম সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে রমরম করে। তাকে মূলত ১৬ জন স্কুল পড়ুয়াকে এই গেম খেলতে বাধ্য করা ও আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিজের দোষ কবুল করেছে ফিলিপ। তার দাবি, যারা এই খেলার শিকার, তারা আসলে প্রত্যেকেই বায়োলজিক্যাল ওয়েস্ট। এমনকি ফিলিপ পুলিশের কাছে দাবি করে, ওই সমস্ত স্কুল পড়ুয়ারা মরতে পেরে খুশিই হয়েছে। তাই তার মনে হয়েছে এই খেলার ফাঁদে কিশোর-কিশোরীকে ফাঁসিয়ে সে আসলে সমাজ পরিস্কার করছে।

মিডিয়ার দৌলতে সকলেই জানে এই গেমে মোট পঞ্চাশটি টাস্ক দেওয়া হয় প্লেয়ারকে। সেই কাজগুলোর মধ্যে যেমন ভূতের সিনেমা দেখা রয়েছে, তেমন ভোররাতে উঠতে হয়। নিজেকে আঘাত করা যেমন ব্লেড দিয়ে কেটে হাতে নীল তিমি আঁকা বা ঠোঁটের পাশে চিড়ে রক্ত বের করা, হাতের শিরা কাটা, ছাদের ধার দিয়ে হাঁটা, এমন বহু ভয়বাহ কাজ করতে হয়। প্রতিটি কাজের শেষেই অ্যাডমিনকে ছবি তুলে পাঠাতে হত প্লেয়ারকে। এই কাজের শেষ চ্যালেঞ্জে কোনও উঁচু বাড়ির ওপর থেকে ঝাঁপ দিতে হয় গেমের চ্যালেঞ্জ নেওয়া কিশোর-কিশোরীকে।

তবে ফিলিপ বুডেকিন, যার তৈরি এই মারণ খেলা এখন সারা দুনিয়ার ত্রাস, তার সম্পর্কে নাকি কমবয়সি মেয়েদের ধারণা অন্যরকম। এইমুহূর্তে সে রয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গের ক্রেস্টি জেলে। কিন্তু ফিলিপের শাস্তির বদলে, মেয়েরা তাকে প্রেমপত্র পাঠাচ্ছে। সেখানে লিখে পাঠাচ্ছে তাদের বাড়ির ঠিকানাও। মনোবিদদের দাবি, মূলত এইসমস্ত মেয়েরাই ব্যক্তি জীবনে সেভাবে বাবা-মা বা বন্ধু-বান্ধবের থেকে ভালবাসা পায়নি। আর ফিলিপ তাদের পাত্তা দেওয়ায়, ভালবাসার টানে তারা বারংবার এই তরুণের ফাঁদে পা দিচ্ছে।

২০১৩ সালে প্রথম এই মারণ খেলার শুরু। তারপর থেকে নিজের গেমের বিভিন্ন ত্রুটি শুধরে এখন একেবারে অন্যভাবে এই খেলা তরুণ প্রজন্মকে এই গেমের দিকে টানছে। ফিলিপ ও তার অন্য বন্ধুরা প্রথমে ভিকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ভয়াবহ ভিডিও দিয়ে তরুণদের আকর্ষণ করা। তারপর যারা সবচেয়ে বেশি তাদের কথা শুনে চলত, তাদের বাধ্য করা আত্মহত্যা করতে। বিভিন্ন নামের আড়ালে এই মারণ খেলার গ্রপগুলো বিশ্বজুড়ে কাজ চালাচ্ছে।