কলকাতা: কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলির চাপের কাছে নতিস্বীকার করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিল বাংলাদেশ। এমনকী রবীন্দ্রনাথের কবিতা আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতেও বাদ পড়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির সিলেবাস থেকে। পাঠ্যক্রমে রদবদল আনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু মুসলিম গোষ্ঠীগুলির দাবি, এই কবিতাটি হিন্দু দেবীর উদ্দেশে লেখা হয়েছে। সে কারণে এটি পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
এছাড়াও বাদ পড়েছে ১৬টি অন্যান্য কবিতা ও গল্প। শরৎচন্দ্রের ছোট গল্প লালু, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী পালামৌ, এস ওয়াজেদ আলির রাঁচি ভ্রমণ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাঁকোটা দুলছে ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ছেলেদের রামায়ণ। তবে রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী রয়ে গিয়েছে সিলেবাসে।
কলকাতায় বাংলাদেশি ডেপুটি হাই কমিশন এই পাঠ্যক্রম বদলকে রুটিন আখ্যা দিলেও বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবি, মুসলিম গোষ্ঠী হেফাজত-এ-ইসলামের দাবি মেনে এভাবে পাঠ্যক্রম থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে এই সব সাহিত্য। যাতে ছোট ছেলেমেয়েদের মন মৌলবাদী ও কট্টরপন্থীদের ল্যাবরেটরি হয়ে উঠতে পারে ও কট্টরপন্থীরা তাদের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণার বীজ বুনতে পারে তাদের মধ্যে।
তবে কলকাতাস্থ বাংলাদেশি এক কূটনীতিকের দাবি, সিলেবাস বদলানোর সিদ্ধান্ত সরকারের, হেফাজত-এ-ইসলাম বা অন্য কোনও গোষ্ঠীর চাপে এ কাজ করেনি তারা। বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করে, তাঁকে মুছে ফেলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যদি এই পদক্ষেপে কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তবে সরকারের দ্বারস্থ হতে পারেন তিনি।
শেখ হাসিনা সরকারের এই পদক্ষেপে আহত এ দেশের বাংলা সাহিত্যিকরা। এক সংবাদপত্রে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ওপর ধর্মীয় চিন্তাভাবনা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তাঁর আশা, বাংলাদেশি নাগরিকরা ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ধর্মের সঙ্গে সাহিত্যকে গুলিয়ে ফেলেননি। শ্রীজাত জানিয়েছেন, আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কবিতাটি সিলেবাস থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে জেনে তিনি বিস্মিত। যখনই তিনি ঢাকা গিয়েছেন, দেখেছেন, কত সম্মানের সঙ্গে এটি গাওয়া হয়। সরকার অবশ্যই সিলেবাস বদলাতে পারে। কিন্তু তা যদি কোনও কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর দাবি মেনে নিয়ে করা হয়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক।
একইভাবে প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশি সাহিত্য সমাজ। বাংলাদেশি-মার্কিন সাহিত্যিক শর্বরী জোহরা আহমেদ মন্তব্য করেছেন, এভাবেই ধর্মীয় কট্টরপন্থা জাঁকিয়ে বসে, মুছে ফেলে দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে এক প্রজন্মের মধ্যে নিজেদের ঐতিহ্য ও মিলিত সংস্কৃতি ভুলে স্রেফ একটি নির্দিষ্ঠ গোষ্ঠীর মধ্যে বদ্ধ হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে হুমায়ুন আজাদের লেখা কবিতা বই। তাতে ছাত্রছাত্রীদের এমন বই পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে, যা তাদের ভালবাসতে ও স্বপ্ন দেখতে শেখায়, এমন কিছু নয়, যা মনের মধ্যে ভয়ের বীজ বোনে, অন্ধ করে দেয়। প্রয়াত সাহিত্যিকের পুত্র, দেশ থেকে নির্বাসিত ব্লগার অনন্য আজাদ মন্তব্য করেছেন, যেভাবে শিক্ষানীতি নিয়ে বাংলাদেশ আপসের পথে হাঁটল, তার একদিন বিরাট মূল্য চোকাতে হবে।
স্কুল পাঠ্যক্রম থেকে রবীন্দ্র, শরৎ লেখনী বাদ দিল বাংলাদেশ, নিন্দায় সাহিত্য সমাজ
ABP Ananda, Web Desk
Updated at:
06 Feb 2017 08:27 AM (IST)
NEXT
PREV
আন্তর্জাতিক (world) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -