মালেগভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে মালদ্বীপ। সোমবার ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্ট্রে জারি হল জরুরি অবস্থা। এই প্রেক্ষিতে নিজ নিজ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে মালদ্বীপে যাত্রায় সাধারণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত ও চিন।


সোমবার, ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন গায়ুম। এদিন রাষ্ট্রপতির তরফে সরকারি টিভি চ্যানেলে এই ঘোষণা করেন তাঁর সহযোগী তথা দেশের আইন বিষয়ক মন্ত্রী আজিমা সোখুর। অর্থাৎ, দেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নিলেন প্রেসিডেন্ট গায়ুম। সামরিক বাহিনীর হাতে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হল, তারা যে কোনও সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার ও আটক করতে পারে।


২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসা ইস্তক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ সহ একাধিক রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি নিয়ে ইয়ামিনের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিল ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক মহল।


মালদ্বীপের রাজনৈতিক অস্থিরতার আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল তখনই, যখন দ্বীপরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেন ইয়ামিন। গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সেদেশের শীর্ষ আদালত।


এর পাশাপাশি, ইয়ামিনের দলত্যাগী ১২ সাংসদের আসনও ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আদালতের ওই রায়ের ফলে, ৮৫ আসন-বিশিষ্ট মালদ্বীপের সংসদে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেত। ফলে, ইয়ামিনের ইমপিচমেন্ট অবশ্যম্ভাবী হতো।


এই বিষয়টিকে বুঝতে পেরেই তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নস্যাৎ করে দেন ইয়ামিন। উল্টে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্ট তার এক্তিয়ার-বহির্ভুত কাজ করছে। ইয়ামিনের দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মানা হবে না।


সাধারণত, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার অন্তত ২ দিন আগে সংসদে জানাতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি সংসদ অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি করে দেন প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়। সংসদের বাইরে মোতায়েন করা হয় সামরিক বাহিনীকে। যাতে কোনও সাংসদ ভেতরে প্রবেশ না করতে পারেন।


প্রসঙ্গত, এই নিয়ে দুবার জরুরি অবস্থা জারি করলেন ইয়ামিন। এর আগে ২০১৫ সালে তাঁর ওপর প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগ ওঠার সময়ও তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। সেবারও মালদ্বীপে রাজনৈতিক অস্থিরতা হয়েছিল। এবারও, সেদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করল বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।


ইতিমধ্যেই সেদেশে যাওয়ার বিষয়ে ট্রাভেল অ্যাডভাইজরি (নিষেধাজ্ঞাস্বরূপ নির্দেশিকা) জারি করেছে ভারত ও চিন। বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মালদ্বীপ যাত্রা এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। পাশাপাশি, মালদ্বীপের ভারতীয় দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।