বেজিং: রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সভ্যতার মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের হাত ধরেই ভারত-চিনের মধ্যে চলতি সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান খোঁজা উচিত বলেই মনে করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। উভয় দেশের সুসম্পর্কের লক্ষ্যে আট টোটকাও বাতলান তিনি।

বর্তমানে চিন-সফরে রয়েছেন প্রণববাবু। এদিন ঐতিহ্যবাহী পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে একটি সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যতের আট স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।

প্রণববাবু জানান, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ভারতের সবপক্ষই (সরকার ও বিরোধী) অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁর মতে, দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ উন্নয়নমূলক সহযোগিতার জন্য উভয় দেশের রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়াটা জরুরি।

তিনি বলেন, ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির জন্য আগে রাজনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে সবপক্ষই বেজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। এর জন্য সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করে থাকেন।

রাষ্ট্রপতি মনে করেন, বর্তমানে দুই দেশই নিজেদের অভিন্ন ইস্যুগুলিকে আরও প্রশস্ত করেছে। একইসঙ্গে, নিজেদের ভেদাভেদকে নিয়ন্ত্রণ করতেও শিখেছে। তবে, এখনও সীমান্ত সমস্যার মতো কিছু জটিলতা রয়েই গিয়েছে। সেগুলিকে সর্বতোভাবে সমাধান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৩,৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত ভাগাভাগি করছে ভারত ও চিন। বেজিংয়ের মতে, বিতর্ক রয়েছে শুধুমাত্র ২ হাজার কিলোমিটার সীমান্তে। বেজিংয়ের দাবি, অরুণাচল প্রদেশ দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। নয়াদিল্লির পাল্টা দাবি, অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ১৯৬২ সালের যুদ্ধে আকসাই চিনের অংশটি চিন দখল করেছে।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই প্রথম সরকারি চিন-সফরে গিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সমস্যা থাকতেই পারে। তবে, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সভ্যতার মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের হাত ধরেই সেই সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান খোঁজা উচিত বলেই আমি মনে করি। তিনি যোগ করেন, উভয় পক্ষকেই এটা মাথায় রাখতে হবে যে, সমাধান খোঁজার কাজ যেন তারা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ফেলে না রাখে।

ভারত-চিন সম্পর্কের ভবিষ্যতের আটটি স্তম্ভকে এদিন চিহ্নিত করেন প্রণববাবু। এর আওতায় রয়েছে— ক্রীড়া ও উৎসবের মাধ্যমে দুই দেশের যুবসমাজের যোগাযোগ বৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পর্যটন - বিশেষকরে মানস সরোবর ও বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্রে ভ্রমণ।

পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতির আট স্তম্ভের তালিকায় রয়েছে নাগরিক সমাজের যৌথ উদ্যোগ ও বিশ্বমঞ্চে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং সামরিক ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতাও।