দুবাই: গল্প হলেও সত্যি! ৪৮ বছর পর সুদূর আবুধাবিতে ভারতীয় ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা হল পাকিস্তানি ভাইয়ের!


এ যেন এক স্বপ্নপূরণ। এ যেন এক গল্পগাথা। প্রায় অর্ধশতক পেরিয়ে যাওয়ার পর শৈশবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া তিন ভাই-বোনের পুনর্মিলন হল। পাকিস্তানের নাগরিক ৭৬ বছরের হামজা সরকার দেখা করলেন ৭৫ বছরের ভাই টিপি মাম্মিকুট্টি এবং ৮৫ বছরের দিদি ইয়াতুর সঙ্গে।

খবরে প্রকাশ, ১৯৫১ সালে কেরলের বাড়ি থেকে আচমকা পালিয়ে যান হামজা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১। ভাই মাম্মিকুট্টি জানিয়েছেন, হামজা বরাবর বেড়াতে ভালবাসত। একদিন হামজাকে তাঁর মা বলেন, মাঠ থেকে গরু চড়িয়ে আনতে। কিন্তু, হামজা সেই যে বেরিয়ে যায়, আর বাড়িমুখো হয়নি।

হামজা জানান, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেনে চেপে কলকাতা যান তিনি। সেখান থেকে বাংলাদেশ, যা তখন পূর্ব পাকিস্তান বলেই পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ থেকে করাচি চলে যান তিনি। সরকার জানান, ১৯৬৮ সালে তিনি একবার বাড়ি ফিরেছিলেন।

হামজার কথায়, আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজস্থান সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। তিন সপ্তাহ ধরে পায়ে হেঁটে একটি বাসে করে হায়দরাবাদ পৌঁছাই। সেখান থেকে মাকে একটা চিঠি লিখি। মা আমার ট্রেনের টিকিটের পয়সা পাঠায়। তা দিয়েই আমি কেরলের বাড়িতে যাই।

পরিবারের সকলে ভেবেছিল, এত বছর পরে ফিরে এসেছে যখন, তখন হামজা এবার আর যাবে না। এই ভেবে তাঁরা হামজার জন্য একটি মুদীর দোকানও খুলে দেন, যাতে সে কাজ করতে পারে। কিন্তু, হামজা তো আর থাকার পাত্র নন! ন’মাস পর দোকানের সামগ্রী কেনার জন্য বেরিয়ে ফের পালিয়ে যান হামজা।

বড় দিদি ইয়াতু বলেন, সেই শেষ আমরা ওকে দেখেছিলাম। তিনি বলেন, এখনও আমার মনে আছে, মা কেমন করে ওর ছবি বালিশের তলায় রেখে সারা রাত কাঁদত।

পুনর্মিলনের ঘটনা ঘটল তার ৪৮ বছর পর। সৌজন্য ফেসবুক। সম্প্রতি, পাকিস্তানে বসবাসকারী হামজার কন্যা আসিয়ার সঙ্গে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আলাপ হয় মাম্মিকুট্টির নাতি নাদির শাহের। নাদির আবুধাবিতে থাকে। সেখান থেকেই হামজার খোঁজ মেলে।

বাকিটা ইতিহাস! তিন ভাইবোনের মিলন হয় আবু ধাবিতে। করাচি থেকে যান হামজা। অন্যদিকে, কেরল থেকে যান তাঁর দিদি ও ভাই।

অর্ধশতক পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এখন হামজার গলায় অবশ্য অন্য সুর। তিনি এখন ভাই ও দিদির সঙ্গে আহু ধাবিতেই থাকতে চান। জানালেন, আর তিনি পাকিস্তানে ফিরতে চান না।