ইসলামাবাদ: ছেঁড়া ওড়নায় ঢাকা মুখে দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট। আরও স্পষ্ট জ্বলজ্বলে দুটো চোখ। সবজে কটা, তীব্র সেই চোখে আফগানিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ আর অর্থনৈতিক হাহাকার যেভাবে ধরা পড়েছে, অনেক তাবড় ফটোগ্রাফারের লাখো টাকার ক্যামেরা তা পারেনি। ১৯৮৪-তে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার ফটোগ্রাফার স্টিভ ম্যাককারির লেন্সে উঠে আসা সেই বিখ্যাত আফগান বালিকার আপাতত ঠাঁই হয়েছে পাকিস্তানের জেলে। কম্পিউরাইজড ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে পেশোয়ার থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পাক পুলিশ।


নাম শরবত বিবি। ৮৪-তে বয়স ছিল ১২। সেই হিসেবে এখন ৪৬। বয়স ঢলেছে, চোখের তীব্রতাও নেই আগের মত। তবু এক ঝলক দেখলেই চিনে ফেলা যায় আশির দশকের সেই কিশোরীকে, যাঁর চোখে চোখ রেখে আফগান বিপর্যয়কে চিনেছিল গোটা বিশ্ব। পাক পুলিশ জানিয়েছে, শরবতের পাক-আফগান দু’দেশেরই নাগরিকত্ব রয়েছে। দুটি পরিচয়পত্রই উদ্ধার হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।

যে সরকারি আধিকারিক শরবত বিবির নামে দু’দেশের পরিচয়পত্র ইস্যু করেন, তিনি অবশ্য গ্রেফতার হওয়ার আগেই জামিন পেয়ে গিয়েছেন।

গত বছর পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডেটাবেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটি শরবত বিবি ও দু’জন পুরুষের নামে তিনটি পরিচয়পত্র ইস্যু করে। সেই দু’জন দাবি করে, তারা শরবতের ছেলে। যদিও শরবতের আত্মীয়দের দাবি, তাঁরা ওদের চেনেন না। নিয়ম লঙ্ঘন করে এই পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি পুলিশ।

১৯৮৪-তে পেশোয়ারের নাসির বাগ শরণার্থী শিবিরে স্টিভ ম্যাককারির ক্যামেরায় ধরা পড়ে গোটা বিশ্বে পরিচিত হন শরবত বিবি। তখন নাম ছিল শরবত গুলা। ৮৫-র জুনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কভারে প্রকাশিত হয় তাঁর ছবি। তারপর থেকে বহু বছর আর তাঁর কোনও খবর ছিল না। ২০০২-এ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকই ফের আবিষ্কার করে তাঁকে। ফের খবরের শিরোনামে উঠে আসেন আফগানি যন্ত্রণার পরিচিত মুখ। এখন আবার জেলের চার দেওয়ালের আঁধারে মুখ লুকিয়েছেন শরবত বিবি। আফগানিস্তানের বেদনা ও মর্মান্তিক দারিদ্র্যের চিরন্তনী প্রতীক হিসেবে।