সৌমিক সাহা, কর্চোভা সীমান্ত : ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে প্রাণঘাতী মিসাইল ! প্রাণ বাঁচাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটছেন ইউক্রেন সীমান্ত পেরনোর জন্য! কিন্তু, ইউক্রেনীয় নন, এমন অনেককে সেই রাস্তাটুকু পেরোতে  সামলাতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা! কিন্তু সীমান্ত পেরোলেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন কই! ওঁত পেতে বসে আছে আরেক বিপদ! 


সাদা হোক বা কালো । ধনী হোক বা গরিব । যুদ্ধের আগুন সবার ঘর পোড়ায় । সবার মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নেয় যুদ্ধ । সেই যুদ্ধে যখন গোটা ইউক্রেন ধ্বংস হচ্ছে । তখন সাধারণ ইউক্রেনীয় থেকে সেখানে পড়তে যাওয়া হাজার হাজার বিদেশি পড়ুয়া। কিংবা বিভিন্ন দেশের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে পালাতে চেয়েছেন । তখন ইউক্রেনীয় নন, এমন অসংখ্য মানুষকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ!


স্বেচ্ছাসেবক ঔরঙ্গ খান জানালেন, ' যখন কোনও অ-ইউক্রেনীয়, ভারতীয় বা বাঙালি বা নেপালি বা পাকিস্তানী বা আফগানিস্তানের নাগরিককে বাসে করে নিয়ে আসতাম, তখন লোকজন তাঁদের মুখচোখ, গায়ের রং দেখে বলতেন বাসে জায়গা নেই! '


তিনি আরও বলেন, ' যাঁরা ইউক্রেন ছাড়া অন্য দেশের নাগরিক, এখানে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। যাকে আমরা ইংরেজিতে ডিসক্রিমিনেশন বলি ! রেসিজমের একটা বড় সমস্যা এখানে আছে।  এখানকার মানুষন ভাবেন যাঁরা ইউক্রেনীয়, গায়ের রং যাঁদের সাদা , তাঁদের বেশি তাঁরা সাহায্য করেন ' 


পোল্যান্ডের মাডেকা সীমান্ত থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে কর্চোভা । সেখানে স্থল সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য তৈরি করা সারি সারি গুদাম । এখন শরণার্থীদের আশ্রয়ের কাজে লাগানো হচ্ছে। সেই কর্চোভাতেই পৌঁছে অন্যরকম দৃশ্যের সাক্ষী হওয়া গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইউক্রেনীয় নন, অথচ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে এসেছেন, এমন মানুষদেরই সাহায্য করছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা!


শুধু বৈষম্যই নয়। সমস্যা আরও গভীরে! রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য বলছে, যুদ্ধের অসহায়তার সুযোগে বিভিন্ন দেশের সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নারী ও শিশু পাচার চক্র! রেড ক্রসের তরফেও স্বেচ্ছাসেবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যুদ্ধপীড়িতদের সাহায্য করতে কর্চোভা সীমান্তে চলে এসেছেন সিঙ্গাপুরের জোনাথন! তাঁর মুখেই শোনা গেল এমন এক অপরাধ চক্রের কথা! 


অচেনা দেশ, অচেনা রাস্তাঘাট, অচেনা মানুষ, বিপদ প্রতি পদে, যুদ্ধের আবহেও এ যেন আরেক যুদ্ধ সব কিছু ছেড়েছুড়ে চলে আসা মানুষগুলোর জন্য। তবু হাজারও প্রতিকূলতার মাঝে সেই সব মানুষদের ভরসা জোগাচ্ছেন জোনাথন, ঔরঙ্গদের মতো মানুষরা।