নিউ ইয়র্ক: ‘যুদ্ধ চাই না আর, যুদ্ধ তো থেমে গেছে’। এবার দেশে ফেরার পালা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংখ্যাতীত মৃত্যু আর রক্তক্ষয়ের পর ঘরে ফিরছেন ক্লান্ত সেনানীরা। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চলছে উৎসব। তখনই এক নাবিক জড়িয়ে ধরলেন নার্সের ইউনিফর্মে থাকা এক তরুণীকে। তারপর চুম্বন। ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু যুদ্ধশেষের বাঁধনহীন আনন্দের প্রতীক হিসেবে সাবিক ও নার্সের সেই চুম্বনের ছবি ইতিহাসে চলে গেছে।


সেদিনের সেই ২১ বছরের তরুণী মারা গেলেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড এলাকায়, বৃহস্পতিবার। বয়স হয়েছিল ৯২। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বয়সজনিত অসুস্থতার কারণেই এই মৃত্যু।

কী নাম ছিল সেই মেয়েটির? কোনও রোমান্টিক বন্ধন না থাকা সত্ত্বেও যিনি চুমু খেয়েছিলেন যুদ্ধশেষে ঘরে ফেরা এক নাবিককে? ছবিটি প্রথম প্রকাশিত হয় লাইফ ম্যাগাজিনে, অনেক ছবির মধ্যে অন্যতম। তারপর ধীরে ধীরে সকলের নজর কাড়ে সেটি। তখনই খোঁজ পড়ে ছবির দুই চরিত্রের। বহু লোক দাবি করেন, তাঁরাই ওই নাবিক আর ওই নার্স। কিন্তু পরে জানা যায় নাবিক জর্জ মেনডোনসা ও নার্স গ্রেটা ফ্রায়েডম্যানের কথা।

দিনটা ছিল ১৪ অগাস্ট, ১৯৪৫। দু’দুটো পরমাণু বোমায় ছিন্নভিন্ন জাপান আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। আনন্দে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় রাস্তায় নেমে এসেছে মার্কিনীরা, রেস্তোঁরা, বার সিনেমা হল- সবেতেই থিকথিক করছে ভিড়।

তখনই যুদ্ধফেরত ঘরপাগল সৈনিক জর্জ মেনডোনসা রাস্তার ধারে দেখতে পান গ্রেটা ফ্রায়েডম্যানকে। সেটাই তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ। মেনডোনসা আর এক নার্সের সঙ্গেই ডেটে যাচ্ছিলেন, গ্রেটাকে দেখে কী ভেবে জাপটে ধরে চুমু খেয়ে বসেন তাঁকে। কিন্তু ‘দ্য কিস’ নামে বিখ্যাত ওই ছবিতে নাকি মোনডোনসার প্রেমিকা রিটা পেরিকেও হাসিমুখে দেখা যাচ্ছে। পরে রিটার সঙ্গে বিয়েও হয় তাঁর।

গ্রেটার বাবা মা দুজনেই জার্মান হলোকাস্টের শিকার। ১৫ বছর বয়সে অস্ট্রিয়া ছেড়ে পালিয়ে আসেন তিনি। তবে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম আইকনিক ছবির অংশীদার হওয়া নিয়ে তাঁর বিশেষ কোনও অনুভূতি ছিল না। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চুম্বন বলতে ঠিক যা বোঝায়, ওটা ঠিক তা ছিল না। বলা যেতে পারে, ছিল উৎসবের অঙ্গ, রোমান্টিক কিছু নয়।

সেদিনের সেই তরুণী মারা গেলেন ৯২ বছরে। তাতে কী? ৯২ তো একটা সংখ্যামাত্র। ফটোগ্রাফির ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে রইল ‘দ্য কিস’-এর অন্যতম চরিত্র গ্রেটা ফ্রায়েডম্যানের ২১ বছর বয়স। যুদ্ধশেষে ঘরে ফেরার বাঁধনহারা আনন্দর অন্যতম প্রতীক হিসেবে।