এদিন হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রনেতার দীর্ঘ বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ওবামা জানান, বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্র— ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর এবং বিস্তৃত হবে, এটাই স্বাভাবিক।
মোদী জানান, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ওবামার সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক দিকগুলির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। মোদী-ওবামার আলোচ্য বিষয়বস্তুর মধ্যে এনএসজি ছাড়াও ছিল সন্ত্রাসবাদ, বিশুদ্ধ বিদ্যুৎ-শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং সাইবার নিরাপত্তা।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ওবামা জানান, ভারতের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি নিয়ে তারা আরও এগিয়েছেন। তিনি বলেন, ক্রমাগত উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্য ভারতের প্রযুক্তির প্রয়োজন। জবাবে এনএসজি ও মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর)-এ ভারতের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মোদী।
এর আগে, হোয়াইট হাউসের বিখ্যাত ওভাল অফিসে মোদীকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানান ওবামা। তিনি বলেন, বন্ধু মোদীকে স্বাগত জানাতে পেরে ভাল লাগছে। তিনি বলেন, মোদীর নেতৃত্ব না কেবল মার্কিন মুলুকে বসবাসকারী ভারতীয়দের উজ্জিবীত করে, খোদ মার্কিনীদেরও উদ্বুদ্ধ করে।
২০১৪ সালে থেকে এই নিয়ে সাতবার ওবামা-মোদীর সাক্ষাৎ হল। এই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু হিসেবে কাজ করছে।
মোদী-ওবামা বৈঠকের ৯টি মূল বিষয় হল-
১) এই সফরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে যেভাবে অনাবাসী ভারতীয়দের বিশাল জমায়েতে হাজির হয়েছিলেন মোদী, এই সফরে সেটা দেখা যাবে না।
২) প্রধানমন্ত্রীর এই সফর থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য রাষ্ট্রসংঘের পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়। বর্তমানে ৪৮টি দেশ এই গোষ্ঠীর সদস্য। তারাই পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত প্রযুক্তির বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত এই গোষ্ঠীর সদস্য হতে চাইছে।
৩) চিনের বিরোধিতায় পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারেনি ভারত। পাকিস্তানকে এই গোষ্ঠীর সদস্য করতে চাইছে চিন। এই কারণেই মার্কিন সাহায্য চাইছে ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনের বিরোধিতা করবে বলেই আশা ভারতের।
৪) লজিস্টিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সমঝোতা আগেই হয়েছে। এবার চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছে ভারত।
৫) এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ভারতে এসে জ্বালানি ভরা, মেরামত এবং পুনরুদ্ধারের কাজ করতে পারবে।
৬) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ‘মিসাইল টেকনলজি কন্ট্রোল রেজিম’-এর সদস্য করতে পারে। সেটা হলে ভারত অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি পাবে। ফলে পাকিস্তানও মোদীর এই সফরের দিকে লক্ষ্য রেখেছে।
৭) এফ-১৬ ও এফ-১৮ যুদ্ধবিমান নিয়েও ভারত-মার্কিন চুক্তি হতে পারে। এই চুক্তি হলে ভারতেই তৈরি হবে যুদ্ধবিমানগুলি।
৮) পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী নিয়েও ভারত-মার্কিন চুক্তি হতে পারে। এই রণতরীতে ১০০টিরও বেশি এই ধরনের যুদ্ধবিমান বহন করা যাবে, যা চিনেরও নেই।
৯) ভারতে ৬টি পরমাণু চুল্লি গড়া নিয়েও চুক্তি হতে পারে।