নয়াদিল্লি: সন্ত্রাসের দুনিয়ায় একসময় তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের (Osama bin Laden) মৃত্যুর পর কার্যত মেরুদণ্ড ভেঙে যায় ‘আলকায়দা’র (Al Qaeda)। গা ঢাকা দিয়ে এতদিন কোনও রকমে যাও বা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন আয়মান আল-জওয়াহিরি (Ayman al-Zawahiri), আমেরিকার ড্রোন হানায় (US Drone Attack) ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। তাতেই ‘আলকায়দা’র উত্তরাধিকারের প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। আর তাতেই একেবারে অগ্রভাগে এক ব্যক্তির নাম উঠে আসছে। তিনি আর কেউ নন, সইফ আল-আদেল (Saif al-Adel )। মিশরের সেনাবাহিনীর এককালীন আধিকারিক, তথা লাদেনের প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রধান। 


‘আলকায়দা’র উত্তরাধিকার কার হাতে, চলছে জল্পনা


‘আলকায়দা’র সম্ভাব্য উত্তরাধিকার হিসেবে সইফের নাম সামনে এনেছে আমেরিকার অলাভজনক সংস্থা ‘মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট’। জওয়াহিরির পর পর তিনিই ‘আলকায়দা’ প্রধান হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে দাবি ওই সংগঠনের। মিশরের সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার সইফ ‘আলকায়দা’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও বটে। ১৯৮০-র আশেপাশে ‘মক্তব আল-খিদমত’ সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আমেরিকার গোয়েন্দাদের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। 


আটের দশকের আশেপাশেই লাদেন এবং জওয়াহিরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সইফের। মিশরের ‘ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ’ সংগঠনেও যোগ দেন সইফ। আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেও যোগ দেন। পরবর্তী কালে লাদেনের নিরাপত্তা প্রধান নিযুক্ত হন সইফ। ২০০১ সাল থেকে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম রয়েছে। তাঁর মাথার দাম রাখা হয়েছে ১ কোটি ডলার। 



আরও পড়ুন: Ayman al-Zawahiri: মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিজের সংগঠন, চক্ষু চিকিৎসক থেকে লাদেন-ঘনিষ্ঠ, শেষ দু’দশকের ত্রাস


এফবিআই-এর তালিকায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বলেই উল্লেখ রয়েছে সইফের। এর পাশাপাশি, তিনি আমেরিকার নাগরিকদের হত্যা, আমেরিকার সম্মত্তি নষ্ট এবং সে দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে উল্লেখ রয়েছে। 


আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সোমালিয়ার মোগাদিশুতে আমেরিকার সেনাবাহিনীর কপ্টার হামলার নেপথ্যে ছিলেন সইফ। তাতে ১৯ জন আমেরিকার নাগরিক মারা যান। সেই সময় বছর ৩০ বয়স হবে সইফের। তার পর ১৯৯৩ সাল থেকেই তাঁর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন গোয়েন্দারা। লাদেনের মৃত্যুর পর ‘আলকায়দা’র কৌশলগত সবকিছু দেখভাল করতেন সইফ। এই মুহূর্তে সইফ ইরানে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন বলে খবর। তাই তিনি ‘আলকায়দা’র দায়িত্ব হাতে পেলে, আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সংঘাত আরও তীব্রতা পাবে বলে আশঙ্কা কূটনীতিবিদদের। তাতে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 


সংগঠনের অন্দরে সইফকে নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে


তবে সইফ ছাড়াও, আবদাল-রহমান আল-মাঘরেবি এবং ইয়াজিদ মেবরেক (আলকায়দা গল দ্য ইসলামিক মাঘরেব) এবং আহমেদ দিরিয়ে (আল শবাব)-এর নামও ‘আলকায়দা’ প্রধান হওয়ার দৌড়ে রয়েছে। এঁদের মধ্যে সইফ সবচেয়ে অভিজ্ঞ হলেও, তাঁর কৌশল নিয়ে সংগঠনের অন্দরে মতবিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে ইদানীং কালে সংগঠন একপ্রকার নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার জন্য সইফকেই দায়ী করেন অনেকে। সেই নিরিখে সংগঠনকে উজ্জ্বীবিত করার প্রশ্নে বাকিরা এগিয়ে যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ‘আলকায়দা’কে নিয়ে এই মুহূর্তে তেমন উদ্বেগের কারণ দেখছেন না কূটনীতিকরা। তাঁদের যুক্তি, আফগানিস্তানেই মূলত এদিক ওদিক ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন সংগঠনের নেতারা। তালিবানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক তারা। এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে বৈধতা পেতে মরিয়া তালিবান। তাই ‘আলকায়দাকে’ বাড়তে দেবে না তারা।