মেলবোর্ন: কিশোর পড়ুয়াদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। পড়াশোনার ফাঁকে পড়ুয়ারা অনলাইন গেম খেলার পাশাপাশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটও ব্যবহার করে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, অনলাইন গেম কিশোর পড়ুয়াদের স্কুলের রেজাল্টের উন্নতি ঘটাতে পারে। এদিক থেকে কিন্তু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ব্যবহার পড়ুয়াদের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট (পিআইএসএ) পরীক্ষায় ১৫ বছর বয়সী অসি পড়ুয়াদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণায় পড়ুয়াদের ইন্টারনেট ব্যবহার ও পড়াশোনার সঙ্গে এর সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে।

সমীক্ষায় ফলাফল অনুযায়ী, কখনওই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে না, বা কদাচিত করে, এমন পড়ুয়াদের তুলনায় যে কিশোররা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে তাদের অঙ্ক, পাঠ এবং বিজ্ঞানে কম নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এর উল্টোটা হয় যারা অনলাইন গেম খেলে তাদের ক্ষেত্রে। এই ধরনের পড়ুয়ারা পিআইএসএ পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে এ কথা জানানো হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এমনও সম্ভব হতে পারে, যে পড়ুয়ারা অঙ্ক, পাঠ ও বিজ্ঞানে ভালো তারা অনলাইন গেম খেলতেই পছন্দ করে।

গবেষণায় বলা হয়েছে,  গেম খেলা ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জন্য যে সময় ব্যয় হচ্ছে তা পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ভিডিও গেমসের মাধ্যমে পড়ুয়ারা স্কুলে শেখা দক্ষতার প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ পায় এবং তা আরও ধারালো করতে পারে।

সমীক্ষাটি করেছেন রয়্যাল ইন্সস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র অ্যালবার্ট পোসো। তিনি বলেছেন, যে পড়ুয়ারা প্রত্যেকদিন অনলাইন গেমস খেলে তারা অঙ্কে গড়ে ১৫ পয়েন্ট ও বিজ্ঞানে ১৭ পয়েন্ট বেশি নম্বর পেয়েছে।

এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে পোসো বলেছেন, অনলাইন গেম খেলার সময় পরবর্তী লেভেলে যাওয়ার জন্য ধাঁধার সমাধান করতে হয়। আর তা করতে গিয়ে পড়ুয়াদের তাদের অর্জিত সাধারণ জ্ঞান ও অঙ্ক এবং পাঠ ও বিজ্ঞানের কোনও না কোনও রকম ব্যবহার করতে হয়।

সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে, যে পড়ুয়ারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে না তাদের তুলনায় যাঁরা প্রতিদিন এই সাইট ব্যবহার করে তারা অঙ্কে ২০ পয়েন্ট কম নম্বর পেয়েছে।

২০১২-র পিআইএসএ পরীক্ষায় ১২,০০০ পড়ুয়ার ক্রমতালিকা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে এই গবেষণায়।

পোসো বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সময় ব্যয় করা হয় তা সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ারা পড়াশোনার কাজে লাগাতে পারত। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও দেখা গিয়েছে যে, যে পড়ুয়ারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট নিয়মিত ব্যবহার করে তারা অঙ্ক, পাঠ ও বিজ্ঞানে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নয়।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় অধিকাংশ ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ জানিয়েছে, তারা অনলাইন গেম খেলে। আর ৭৮ শতাংশ পড়ুয়া প্রত্যেক দিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে।