ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী যতই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করুক না কেন, সেদেশের সংবাদমাধ্যমই বলছে, সন্ত্রাসবাদীরা বহাল তবিয়েত আছে। সন্ত্রাসবাদ বিন্দুমাত্র কমেনি। গতকাল পাকিস্তানের বালুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে তিনটি নির্বাচনী জনসভায় জঙ্গি হামলায় দু’জন প্রথমসারির রাজনৈতিক নেতা সহ অন্তত ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৫ তারিখ সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ায় ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গতকালের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর আজ পাকিস্তানে জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আজ পাক সরকার ও সেনার বিরুদ্ধে সর বিভিন্ন সংবাদপত্র। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের পিছু হঠতে বাধ্য করা হয়েছে বলে যে দাবি করছে সরকার, তাতে রক্তাক্ত ছিদ্র রয়েছে। পুলিশ, আধাসেনা ও সেনাবাহিনীর নিরন্তর চেষ্টায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ বন্ধ হয়নি। নির্বাচনী প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন এই ধরনের হামলা তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তদারকি সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে রাজনীতিবিদরা নির্বাচনী প্রচারে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি আছে। সব দলের প্রার্থীর জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ডন সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘হঠাৎ সন্ত্রাসবাদী হামলা বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে প্রার্থীরা নিরাপত্তা চাইছেন, তাঁদের দ্রুত সাহায্য করতে হবে সরকারকে। যে তিন প্রার্থীর উপর হামলা হয়েছে, এর আগেও তাঁদের খুনের চেষ্টা হয়েছিল। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি প্রচারই জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা নির্বাচনের আগে ভাল লক্ষণ না। সন্ত্রাসবাদী হামলায় এত মানুষের মৃত্যু বুঝিয়ে দিয়েছে, গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। গোয়েন্দাদেরও নিজেদের কাজ করতে দিতে হবে। নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যেই হামলা চালানো হচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’

দ্য নিউজের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের বারবার বলা হয়েছে, জঙ্গিদের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক সন্ত্রাসবাদী হামলা দেখিয়ে দিয়েছে, জঙ্গিরা আগের মতোই সক্রিয়। যে প্রার্থীদের উপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে, তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নির্বাচনের বিশুদ্ধতা কেন বজায় রাখা সম্ভব হয়নি, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে সরকারকে। যখন নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উপর হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা, তখন স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট দলগুলি লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের ঘোষণা অপরিণত ছিল। এখন গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই চালাতে হবে।’