ইসলামাবাদ: নিয়ন্ত্রণ রেখায় তট্টা পানি এলাকায় ভারতীয় সেনার একটি চৌকি তাদের সেনাবাহিনী গুঁড়িয়ে দিয়েছে, ৫ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়েছে বলে দাবি করল পাকিস্তান।
গতকাল গভীর রাতে এ ব্যাপারে ট্যুইট করে একটি ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর, যাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি চৌকির ওপর বোমাবর্ষণ ও, সেখান থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখা যাচ্ছে। ট্যুইটে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ রেখায় তট্টা পানি এলাকায় নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা ভারতীয় সেনার চৌকি ধ্বংস করে দিয়েছে পাক সেনার জওয়ানরা। ৫ ভারতীয় সেনা নিহত, জখম বহু। নিরপরাধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ভারতের সন্ত্রাসবাদী হামলার মুখের মতো জবাব দেওয়া হবে।





যদিও তাঁর দাবি ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে নয়াদিল্লিতে বিবৃতি দিয়েছেন ভারতীয় সেনার এক অফিসার। পাক সেনার মুখপাত্রটি এর আগে বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের 'অনৈতিক', 'অপেশাদার' মনোভাবের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেখানকার সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে।
গতকাল পাকিস্তান ইসলামাবাদে ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার জে পি সিংহকে তলব করে ক্ষোভ জানায় যে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতীয় সেনা জওয়ানদের 'বিনা প্ররোচনা'য় গুলিচালনার ফলে বাট্টাল-মাধারপুর রোডে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া এক গাড়ির চালক প্রাণ হারিয়েছেন। বাচ্চাগুলি আতঙ্কিত হয়ে যায়।

পাশাপাশি লন্ডনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী আহসান ইকবাল ভারতকে অভিযুক্ত করে বলেন, উপমহাদেশে আস্থার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, পাকিস্তান তাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারত ২০১৬-য় ইসলামাবাদে যে সার্ক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, তা একতরফা বয়কট করে। পাকিস্তান শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতা দেখালেও সাড়া দেয়নি ভারত, একতরফা আচরণ করেছে। এতে হতাশ পাকিস্তান। লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান সরকারের একটা নির্দিষ্ট মানসিকতা আছে। ওরা ভাবে, পাকিস্তানকে ওরা ধমকে-ধামকে রাখতে পারে। কিন্তু এই মনোভাব চলবে না। আমাদের পরিণত মানসিকতা দেখাতে হবে কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ১০০ কোটির বেশি মানুষের ভবিষ্যত্ বিপন্ন হতে পারে। ভারতের সার্কে সম্মেলনে না আসার সিদ্ধান্ত কাম্য ছিল না, আদৌ কূটনীতিসুলভ নয়, শান্তির স্বার্থে একেবারেই উপযোগী নয়। এহেন একপেশে পদক্ষেপে শুধু অনাস্থাই বাড়বে। আমাদের বিভিন্ন মঞ্চে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা করা উচিত।

প্রসঙ্গত, উরির সেনা ছাউনিতে পাকিস্তানে আশ্রয় পাওয়া জৈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি বাহিনীর হামলায় ১৮ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর জেরে ইসলামাবাদে হতে চলা সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত।
ইকবাল হলেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি আরও বলেন, নওয়াজ শরিফকে তাঁর ভারত নীতির জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তিনি বেশ সংযম দেখিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে শান্তি স্থাপনেও দায়বদ্ধ ছিলেন। এজন্য নিজের দেশে বিরোধীরা তাঁকে 'মোদী কি ইয়ার' বলে বিদ্রূপও করে। কিন্তু ভারত সাড়া দিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি। আমাদের হতাশ করল ওরা।
২০০৮-এর মুম্বই হামলায় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উদ্যোগ মার খেয়েছে বলে অভিমত জানিয়ে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ভারত, পাকিস্তানের সহযোগিতা জোরদার হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উল্টে তা নেতিবাচক শক্তিগুলির হাতিয়ারে পরিণত হল, কারণ শান্তি প্রক্রিয়াই বানচাল হয়ে গেল হামলার জেরে। এক পক্ষ চাইলেই শান্তি আসে না, দুপক্ষকেই সমান উদ্যোগ নিতে হয়। যাবতীয় আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানসূত্র রয়েছে এই এলাকায় সহযোগিতা, বোঝাপড়া আরও গভীর করার মধ্যে।