ইসলামাবাদ: ইলেকশনস অ্যাক্ট ২০১৭ থেকে একটি ধারা বাদ পড়েছে। শপথ নেওয়ার সময় জনপ্রতিনিধিদের এতদিন সকলের ওপর মহম্মদের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিতে হত। সেই ধারাটি বাদ পড়েছে নতুন পাশ হওয়া আইনে। এই ইস্যুতে আরও জটিল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান পরিস্থিতি।


ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডির ওপর ব্যস্ততম রাজপথ ৩ সপ্তাহ ধরে বন্ধ করে রেখেছে জঙ্গিরা। তাদের দাবি, আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে ১০ জন, আহত ২৫০-র বেশি।

পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী গতকাল জলকামান, কাঁদানে গ্যাস দিয়ে ও লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের হঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি বিশেষ। উল্টে ইসলামাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা চলে গিয়েছে আন্দোলনকারীদের দখলে, অসংখ্য তাঁবু জ্বালিয়ে কাঁদানে গ্যাসের তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করছে তারা। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলি খানের বাড়ির মূল দরজায় বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। মধ্যস্থতা করতে এসে মার খেয়েছেন ক্ষমতাসীন পিএমএল-নওয়াজের এক জনপ্রতিনিধি। জ্বালানো হয়েছে বহুতল, সংবাদমাধ্যমের ওপরেও হামলা চলেছে।

পাকিস্তান সরকার আবার সব কিছুর মত এতেও ভারত জুজু দেখছে। পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল দাবি করেছেন, কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলির ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ  রয়েছে, তাঁরা দেখছেন, কেন তারা এমনটা করল।

পরিস্থিতির লাইভ দেখানো হলে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে আশঙ্কায় পাক সরকার দেশের যাবতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে, ব্লক করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট। কিন্তু এরপরেও বিক্ষোভ ইসলামাবাদ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে করাচি, হায়দরাবাদ, লাহোর, গুজরাট, গুর্জনওয়ালা, ফয়জলাবাদ ও পেশোয়ারে।

গতকাল গভীর রাতে পাক সরকার কট্টরপন্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ বন্ধ করে। তবে রাজধানী ইসলামাবাদের পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সেনা নামানো হয়েছে। আন্দোলনের মূল হোতা ধর্মীয় গোষ্ঠী তেহরিক ই লাবাইক ইয়া রসুল আল্লা। অঅল্পদিন আগে এদের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে পাক নির্বাচন কমিশন। অন্যান্য মৌলবাদী গোষ্ঠী তেহরিক ই খতম ই নাবুয়াত ও সুন্নি তেহরিক পাকিস্তানও যোগ দিয়েছে বিক্ষোভে।

জঙ্গিদের আশঙ্কা, ওই ধারা তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বহু নিন্দিত পাকিস্তানি ব্লাসফেমি বা ধর্মবিরোধী আইন  লঘু করে দেওয়া হয়েছে। এতে সুবিধে হবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। যদিও পাক সরকার দাবি করে, নেহাত টাইপের ভুলে ওই ধারা বাদ পড়েছে, তা আবার ঢুকিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মৌলবীরা তুষ্ট নন, তাঁরা আইনমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাড়া অন্য কিছু মানবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।