ইসলামাবাদ: মুম্বই সন্ত্রাসের মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সঈদের যাবতীয় তথাকথিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, সেগুলির সম্পত্তি, জমিজমার নিয়ন্ত্রণ অভিযান চালিয়ে হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে পাকিস্তান? বিভিন্ন প্রাদেশিক ও ফেডেরাল সরকারকে পাঠানো গত ১৯ ডিসেম্বরের এক গোপন নির্দেশে এমনই প্ল্যান রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেছে প্রশাসন। তারই একটিতে হাজির থাকা তিন অফিসার জানিয়েছেন, 'সিক্রেট' ছাপ মারা অর্থমন্ত্রকের ১৯ ডিসেম্বরের ওই নথিতে পাকিস্তানের ৫টি প্রদেশের সরকার ও আইন প্রনয়ণকারী এজেন্সিগুলিকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অ্যাকশন প্ল্যান জমা দিয়ে জানাতে বলা হয়, সঈদের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া ও ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের নিয়ন্ত্রণ 'হাতে নেওয়া যায়'।
আমেরিকা দুটি গোষ্ঠীকেই সঈদের সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার 'সন্ত্রাসবাদী ফ্রন্ট' তকমা দিয়েছে। ১৯৮৭ সালে তৈরি লস্করকে ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার জন্য দায়ী করেছে ভারত, আমেরিকা উভয়েই। প্রায় ১৬৬ জন নিহত হয় সেই হামলায়। সঈদ অবশ্য মুম্বই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ বারবার নাকচ করেছে। পাকিস্তানের এক আদালতও তাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পায়নি।
১৯ ডিসেম্বরের নির্দেশে 'ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স'-এর কথা বলা হয়েছে। শুধু সঈদের দুটি সেবামূলক সংস্থার উল্লেখ করে ওদের বিরুদ্ধে 'ব্যবস্থা নিতে হবে' লেখা রয়েছে তাতে।
ওই টাস্ক ফোর্স হল একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যারা অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও সন্ত্রাসে অর্থ বিনিয়োগ রুখতে ব্যবস্থা নেয়। তারা পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অর্থ ঢালা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় তাদের নাম একটি নজরদারি তালিকায় উঠতে পারে।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণমন্ত্রী এহসান ইকবাল, যিনি এই সংক্রান্ত এক বৈঠকে ছিলেন, শুধু এটুকুই বলেন যে, পাকিস্তানে সব নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর তহবিল সংগ্রহ বন্ধ করতে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইকবালের দাবি, তাঁরা আমেরিকার চাপে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বলেন, কাউকে খুশি করার কিছু নেই। আমরা দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসাবে কাজ করছি।
এদিকে জামাত ও ফালাহ-র মুখপাত্ররা সরকারি বিজ্ঞপ্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তাদের দাবি, এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযান সংক্রান্ত খবর তাদের কাছে নেই। একজন বলেন, আমাদের কার্যকলাপ, সম্পত্তির ব্যাপারে কেউ কিছু জানতে চায়নি।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সত্যিই পাকিস্তান এই প্ল্যান কার্যকর করার পথে এগোলে তা হবে সঈদ-বিরোধী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে এক সত্যিকারের বড় পদক্ষেপ। সঈদের ৩০০-র মতো স্কুল, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, প্রকাশনা সংস্থা, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা আছে। জামাত, ফালাহ-তে কাজ করে প্রায় ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, কয়েকশো মাইনে করা কর্মী।