ইসলামাবাদ: মধ্যরাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (Pakistan Prime Minister) পদ থেকে অপসারিত হলেন ইমরান খান (Imran Khan)। সুপ্রিম কোর্টের (Pakistan Supreme Court) নির্দেশ মেনে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টাতেই ইমরানের বিরুদ্ধে আস্থাভোট (Trust Vote) হওয়ার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু প্রথমে ভোটাভুটির সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। তার পর দীর্ঘ সময় ধরে চলে চাপানউতর। শেষমেশ রাত ১১টা বেজে ৫৮ মিনিটে শুরু হয় ভোটাভুটি। তাতে ৩৪২ আসনের পাকিস্তান অ্যাসেম্বলিতে ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে ১৭৪ জন ভোট দেন। তাতেই ইমরান অপসারিত হন। পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরানই প্রথম প্রধানমন্ত্রী আস্থাভোটে হেরে সরতে হল যাঁকে। আবার পূর্বসূরি সকলের মতোই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যকালের মেয়াদ সম্পূর্ণ হল না তাঁরও।


বিরোধী ঐক্যেই বধ ইমরান


তবে শনিবার রাতে ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। বরং ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে অ্যাসেম্বলি ছেড়ে বেরিয়ে যান দলের সদস্যরা। শুধুমাত্র বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীরাই ইমরানের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে অংশ নেন। ইমরান নিজেও আস্থাভোট চলাকালীন অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত ছিলেন না। আস্থাভোটে পরাজয়ের পর মুহূর্তের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী, পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন শেহবাজ শরিফ। ইমরানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গোড়া থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন তিনি।


আরও পড়ুন: Pakistan Emergency: মধ্যরাতে পাকিস্তানে চূড়ান্ত নাটকীয় পরিস্থিতি, দেশজুড়ে জারি লাল সতর্কতা


ইমরানের বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে পাকিস্তানের গোটা বিরোধী শিবিরকে একজোট হতে দেখা গিয়েছে। তাতে সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী রাজনীতিকরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন উদারপন্থী এবং আদ্যোপান্ত ধর্মীয় কট্টরবাদে বিশ্বাসী দলও। তাতেই ইমরান সরকারকে হটানো গিয়েছে বলে বিশ্বাস রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তবে ইমরানকে অপসারিত করলেও, আগামী দিনে প্রতিহিংসার রাজনীতি হবে না বলে জানিয়েছেন শেহবাজ। দেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে তথা পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো পাকিস্তানবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশের মানুষ একজোট না হলে গণতন্ত্র রক্ষা পেত না বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আপাতত ইমরান জমানার সমাপ্তি পাকিস্তানে


সপ্তাহের শুরুতে কার্যত গায়ের জোরে তৎকালীন ইমরান সরকার আস্থাভোট বাতিল করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইমরানকে বিমুক্ত করে ঘোষণা হয় তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন করানোর। কিন্তু দেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। শনিবার অ্যাসেম্বলিতে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোটাভুটির নির্দেশ আসে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্তকে ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ইমরানের দল। কিন্তু রমজানের জন্য আদালত নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শনিবার সেই আবেদনের শুনানি হয়নি।


২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইমরান। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিচ্ছিল। কোভিড-উত্তর পর্বে পাকিস্তানের অর্থনীতি কার্যত তলিয়া যাওয়ার মুখে। এমন অবস্থায় ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন তো বটেই, সরকারি কোষাগারের টাকা অপ্রয়োজনে খরচের অভিযোগ সামনে আসে। এই সব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমা হতে হতে তা গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। নওয়াজ শরিফের কন্যা মরিয়ম শরিফ থেকে শেহবাজ, বিলাবল, ইমরান বিরোধী শিবিরে একজোট হতে শুরু করেন সকলে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে ইমরান সরকারের বিরুদ্ধএ অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ে। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর শনিবার শেষমেশ ভোটাভুটি সম্পন্ন হল। সরলেন ইমরান খান।