নয়াদিল্লি: ‘অসাবধানতাবশতঃ ভুল করে’ সীমান্ত টপকে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া ভারতীয় সেনা জওয়ান চান্দু বাবুলাল চবনকে  'সৌহার্দ্যের বার্তা' দিতে ছেড়ে দিল ইসলামাবাদ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উরি হামলার পাল্টা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কয়েক ঘণ্টা পর ২৯ সেপ্টেম্বর ‘বুঝতে না পেরে’ পাক ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে ধরা পড়ে যান চান্দু। তিনি ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ব্যাটালিয়নের জওয়ান।

সেনাবাহিনীর তরফে তখন জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, চান্দুর ব্যাটালিয়ন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে সামিল ছিল না। তিনি যে ফাঁড়িতে নিযুক্ত ছিলেন, সেখানে তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারের সঙ্গে বচসার পর তিনি মেন্ধর সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরন। জম্মু ও কাশ্মীরে হিংসা-অশান্তি সহ নানা ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, বোঝাপড়া কার্যত থমকে রয়েছে। তার মধ্যেই আজ চান্দুকে ওয়াগা সীমান্তে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখন তিনি রয়েছেন সেনাবাহিনীর হেফাজতে। তারা তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছে।

পাক সেনাবাহিনীর ট্যুইটে অবশ্য দাবি করা হয়, তিনি নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোন ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পরদিন। কমান্ডারদের কাছে থেকে দুর্ব্যবহার পাওয়ার অভিযোগ তুলে নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিজের ফাঁড়ি ত্যাগ করে পাক সেনার কাছে নিজেই হাজির হন তিনি। তাঁকে ‘বুঝিয়েসুঝিয়ে নিজের দেশে ফিরে যেতে রাজি করানো হয়েছে’।

পাশাপাশি পাক বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, মানবিকতার খাতিরে এবং  নিয়ন্ত্রণ রেখা ও অস্থায়ী সীমানায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার দায়বদ্ধতা থেকেই ওই ভারতীয় সেনা জওয়ানকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাক সরকার। একইসঙ্গে পাক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের হঠকারিতা সত্ত্বেও পাকিস্তান এই এলাকায় শান্তি চায়, আঞ্চলিক শান্তি,  নিরাপত্তা বানচাল করার লক্ষ্যে যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে।

চান্দুর নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ওপারে চলে যাওয়ার কথা সঙ্গে সঙ্গে পাক কর্তৃপক্ষকে জানান সেনা কর্তারা। যদিও তিনি যে তাদের হেফাজতে রয়েছেন, তা পাক  সেনাবাহিনী সরকারি ভাবে স্বীকার করে ১৩ অক্টোবর। তার আগে সেপ্টেম্বরে পাক সংবাদপত্র দি ডন নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক প্রতিবেদনে জানায়, পাক সেনাবাহিনী এক ভারতীয় জওয়ানকে পাকড়াও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে, তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও পরে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে তারা।  কিন্তু চান্দু কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরনো লোকজনের ক্ষেত্রে চলতি নিয়মের পাশাপাশি  হেফাজতে থাকা শত্রু পক্ষের সেনাকে নিয়ে কী করা হবে, সে ব্যাপারে জেনিভা কনভেনশনও মানতে বাধ্য ভারত, পাকিস্তান।

সেই প্রেক্ষাপটেই গত নভেম্বরে প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ ভাম্বরে বলেন, ওই জওয়ান আমার কেন্দ্রেরই বাসিন্দা। ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি আমরা। ডিজিএমও, বিদেশমন্ত্রক ও কূটনৈতিক চ্যানেলে কথা হচ্ছে। পাকিস্তান যে ওকে হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করেছে, এটাই আশার কথা। ওকে একদিন ফেরত দিতেই হবে ওদের। প্রতিবেশী  দেশটি বিরূপ। তবে পরিস্থিতি ভাল হলে ও ফিরে আসবে, নিশ্চিত আমরা। সর্ব স্তরে চেষ্টা চলছে।

অবশেষে তা সফল হল আজ।