ইসলামাবাদ: সেনাবাহিনীর সরকার পরিচালনায় মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। তারা সংবিধানে বেঁধে দেওয়া ভূমিকা পালনেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখুক। নিজের অধীনস্থ শীর্ষ সেনাকর্তাদের তিনি এমনই পরামর্শ দিয়েছেন বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে পাক সংবাদপত্র 'দি নেশন'। এমনকী পাক সেনা অফিসারদের তিনি প্রতিবেশী ভারত কীভাবে সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সফল হয়েছে, সে ব্যাপারে একটি বই পড়ে দেখতেও বলেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে অসামরিক সরকার, প্রশাসনের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্পর্ক, ভারতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কেন, কীভাবে সফল হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে বইটিতে। 'আর্মি অ্যান্ড নেশন' নামাঙ্কিত ৩০০ পৃষ্ঠার বইটির লেখক ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রফেসর স্টিভ উইলকিনসন। উইলকিনসন দেখিয়েছেন, দেশবিভাজনের পরই সামরিক, অসামরিক পক্ষগুলির ক্ষমতার ভারসাম্যে ঘাটতি দূর করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করে ভারত।
গত ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনার সদর কার্যালয়ে শীর্ষ সামরিক অফিসারদের এক সভায় করা বাজওয়ার ওই মন্তব্যে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাক সেনার সম্পর্ক, সমীকরণে বদলের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনা হল, বাজওয়া যে রাহিল শরিফের হাত থেকে সেনাপ্রধানের ব্যাটন তুলে নিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে মসৃণ সম্পর্ক, বোঝাপড়া ছিল না পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফের।
পাক সংবাদপত্রটির রিপোর্টে প্রকাশ, বাজওয়া তাঁর অধীনস্থ অফিসারদের কোনও রাখঢাক না করে বলে দিয়েছেন, দেশের অসামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সেনার সংঘাত নয়, বরং সহযোগিতা, বোঝাপড়ার সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। বাজওয়া নাকি বুঝিয়েছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রশাসনের সঙ্গে সেনার বিরোধ, সংঘাত আছে, এমন ধারণা তৈরি হলে তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক হবে।
পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই সামরিক বাহিনী, অসামরিক রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘাত রয়েছে। ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তান তার ইতিহাসের অর্ধেক সময়কাল সামরিক একনায়কতন্ত্রের শাসনে কাটিয়েছে। ২০০৮-এর পর সামরিক শাসন না থাকলেও সেনার ক্ষমতা, প্রভাব এতটুকুও কমেনি। তারা একটা বড় শক্তি হয়েই থেকে গিয়েছে।