মীরপুর (পাক অধিকৃত কাশ্মীর): পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনা নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে। কিন্তু পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাকিস্তান সরকারের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার সেখানকার নেতৃবৃন্দ।


বেআইনিভাবে দখল করে রাখা কাশ্মীরে সামরিক আদালত গঠন করছে পাকিস্তান। এর কড়া প্রতিবাদ জানালো ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টি। সামরিক আদালত গঠনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের আরও বেশি কন্ঠরোধ করা হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

সম্প্রতি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মীরপুরে ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অ্যান্ড ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেসন ইন পিওকে অ্যান্ড গিলগিট বাল্টিস্তান’ শিরোনামে একটি সম্মেলনে কাশ্মীরী নেতৃবৃন্দ পাক সরকারের দানবীয় আইন ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের তীব্র বিরোধিতা করেন।

২০১৫-র জানুয়ারীতে পাক সরকার সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছিল। এরপর থেকে পাক নিরাপত্তা বাহিনী এই প্ল্যানের আওতায় অধিকৃত কাশ্মীরের বহু জাতীয়তাবাদী নেতাকে গ্রেফতার করেছে। সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাবে অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট বাল্টিস্তানে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের প্রয়োগ ও সামরিক আদালত গঠনের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দের যুক্তি, পাকিস্তানের বিচারবিভাগের আওতাধীন নয় এই এলাকা।

জেকে পিপলস ন্যাশনাল পার্টির প্রেসিডেন্ট আসিফ শাহ কাশ্মীরী বলেছেন, গিলগিট বাল্টিস্তানে পাক আদালত বাবা জান ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দায়ের করে তাঁদের ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।আমরা এর কঠোর নিন্দা করি।

তিনি আরও বলেন, আরও অনেক নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তানে পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দায় সরব হন সম্মেলনের বক্তারা। তাঁরা পাক সরকারের কাশ্মীর নীতিরও সমালোচনা করেন।

জে অ্যান্ড কে প্লেবিসিট ফ্রন্ট (জেকে মাহাজ-ই-রাই শুমারি)-র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট নাসির আনসারি বলেন, আমরা একটি আধুনিক পাকিস্তান চেয়েছিলাম। কিন্তু পাকিস্তান পরমাণু বোমা তৈরি করছে। একজন মানুষ কি পরমাণু বোমা খেয়ে পেট ভরাবেন? গত ৭০ বছরে পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের জন্য পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাও করে উঠতে পারেনি। আমরা কি বিশ্বাস রাখতে পারি যে এই পাকিস্তান আমাদের স্বাধীন করবে?

অধিকৃত কাশ্মীরের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যাপক রিগিংয়ের নিন্দাতেও সোচ্চার হন নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দলগুলি ভোটে অংশ নিতেই দেওয়া হয়নি।

ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের অপপ্রয়োগ নিয়ে পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করেছেন অধিকৃত কাশ্মীরের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, বাস্তবে যারা জিহাদি ও ধর্মীয় মৌলবাদী, তাদের বিরুদ্ধে এই প্ল্যান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট-পাকিস্তানের রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে এই প্ল্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তান পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত নয় এবং এই অঞ্চলে পাক আইনও প্রযোজ্য নয়।

জেকে ফ্রিডম মুভমেন্টের সেক্রেটারি জেনারেল শফিক কায়ানি বলেছেন, কাশ্মীরে যারা স্বাধীনতা চাইছেন, তাঁদের গ্রেফতারের জন্য ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে পাকিস্তান। করাচিতে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই প্ল্যানের প্রয়োগ হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কায়ানি।

পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তানের বহু রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তাঁদের অনেকেই জেলে বন্দী। এখানকার লোকজনের মতপ্রকাশের অধিকার নেই। কেউ যদি স্বাধীন মতপ্রকাশ করেন, তাহলেও তাঁকে সন্ত্রাস-দমন আইনের কবলে পড়তে হয়।