নয়াদিল্লি: ফের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি পড়শি দেশ মায়ানমারে। এখনও গৃহবন্দিই রয়েছেন আং সান সুচি। সেই আবহে ক্ষমতাসীন জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। তবে শুধুমাত্র বিক্ষোভে থেমে নেই এই বিদ্রোহ। জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চিন প্রদেশে সংঘর্ষ চলছে জুন্টা এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে। তাতে এখনও পর্যন্ত পাল্লা ভারী বিদ্রোহীদের। জুন্টা বাহিনীর একটি দল বিদ্রোহীদের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে বলে খবর। (Myanmar Rebellion)
বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সামনে কমপক্ষে ২৮ জন পুলিশকর্মী আত্মসমর্পণ করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ১০ জনকে। পশ্চিম মায়ানমারের রাখিন প্রদেশে স্বতন্ত্র শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার পথে এগোচ্ছে বিদ্রোহীরা। অক্টোবর মাসের শেষ থেকে জুন্টার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেছে আরাকান আর্মি। জায়গায় জায়গায় সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়েছে তারা। (Myanmar News)
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তিনটি সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে মায়ানমারে, তার মধ্যে আরাকান আর্মি অন্যতম। তারাই জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এই মুহূর্তে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে রাখিন প্রদেশে। সেখানে রাস্তায় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়িও চোখে পড়েছে। তবে চিন সীমান্তে সেনাবাহিনীর একাধিক পোস্ট ইতিমধ্যেই দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। ২০২১ সালে আং সান সুচিকে উৎখাত করে ফের মায়ানমারে ক্ষমতা দখল করে জুন্টা। তার পর এই প্রথম এত বড় বিদ্রোহের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এই আবহে মঙ্গলবার বিবৃতি জারি করেন জুন্টা মুখপাত্র জউ মিন টুন। তিনি জানান, বিদ্রোহীরা গোটা দেশে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তবে সেনার পোস্ট বেহাত হয়ে যাওয়ার খবরকে মিথ্যা প্রচার বলে বলে দাগিয়ে দেন তিনি। উত্তর-পশ্চিমের চিন এবং রাখিন প্রদেশই নয় শুধু বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে ভারতের মণিপুর সংলগ্ন সাগাইং, চিন সীমান্তে অবস্থিত শান প্রদেশেও। সাগাইংয়ের খাম্পাত এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।
সে দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দেশের তিনটি বিদ্রোহী সংগঠন জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ১০২৭’-এর ঘোষণা করেছে। সীমান্ত সংলগ্ন একের পর এক এলাকার দখল নিতে শুরু করেছে তারা। কমপক্ষে ১০০টি সেনা আউটপোস্ট দখল করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই। সোমবার চিন প্রদেশের রিখাওদর এবং খাওমাওয়ির দখল নেয় তারা। বিদ্রোহী শিবিরের ৮০ জন যোদ্ধা মিলে সেখানে জুন্টা বাহিনী এবং পুলিশের মোকাবিলা করে। রিখাওদর ভারতের মিজোরামের জোখাওথর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে ইতিমধ্যেই মায়ানমারের নাগরিকরা মিজোরামে পালিয়ে আসতে শুরু করেছেন। শুধু তাই নয়, বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়ে মায়ানমারের ৪৩ জন সেনাকর্মীও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মিজোরামে ভারতীয় সেনার হাতে আটক হন তাঁরা। পরে তাঁদের মায়ানমারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে জুন্টা নিযুক্ত মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট মিয়িন্ত সোয়ে গত সপ্তাহে মুখ খোলেন। তিনি জানান, মায়ানমার এই মুহূর্তে কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জুন্টার দাবি, বিদ্রোহী নয়, আসলে সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। যদিও বিদ্রোহী সংগঠন মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির মুখপাত্র কিয়াও নাইং জানান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাঁরা। এর আগেও চিন প্রদেশ সশস্ত্র সংঘর্ষের সাক্ষী থেকেছে। ২০২১ সালে সুচিকে উৎখাত করে জুন্টা যখন ক্ষমতা দখল করে, সেই সময় সেখানকার হাজার হাজার মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন।