ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দ্বিতীয় দফায় ভাসান চর দ্বীপে সরানোর কাজ শুরু করল বাংলাদেশ সরকার। মঙ্গলবার থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। বন্যা-প্রবণ ওই দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরানোর বিরোধিতা করেছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলি। রাষ্ট্রসংঘ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলেও, বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে কাউকে যেন জোর করে ওই দ্বীপে তুলে নিয়ে যাওয়া না হয়।


গত মাসের গোড়ায় প্রায় ১৬০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসান চর দ্বীপে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল হাসিনা সরকার। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই বাসিন্দারা মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া রিকেটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের ভাসান চর দ্বীপের নতুন ঠিকানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ভাসান চর দ্বীপে এঁদের স্থানান্তর ঘিরে সরব হয় বেশকয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তাদের বক্তব্য বাংলাদেশের উপকূলে ঝড়-ঝঞ্ঝা নিয়মিত ঘটনা। ১৯৯১ সালে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড়। সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ঢেউয়ের উচ্চতা ছুঁয়েছিল সাড়ে চার মিটার। মারা গিয়েছিলেন এক লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার মানুষ। এরপরে যদিও বাংলাদেশ সরকার ওই দ্বীপভূমি রক্ষা করতে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে।. যা এক লক্ষ মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছে। ওই দ্বীপে জীবনের ঝুঁকির কথা মানতে নারাজ বাংলাদেশ সরকার। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী আব্দুল মোমিন বলেছেন,

’’ওই দ্বীপ সম্পূর্ণ ভাবে নিরাপদ।‘‘

সরকারের আরও দাবি, এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া একেবারেই স্বেচ্ছায়। যদিও প্রথম দলের কিছু শরণার্থীর অভিযোগ তাদের ভাসান চর দ্বীপে উঠে যেতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ সরকার। নৌবাহিনীর কমান্ডোর আবদুল্লা আল মামুন চৌধুরী বলেছেন, ’’নতুন করে যারা আসছেন তাঁদের সকলকে স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত।‘‘

এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রসংঘ নাক না গলালেও মাত্র কুড়ি বছর আগে জেগে ওঠা ওই দ্বীপভূমিতে কাউকে যেন জোর করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া না হয় তা দেখতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ’’রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। শরণার্থীদের একাংশের অভিযোগ তুলেছে ভাসান চর দ্বীপে তাঁদের সরে যাওয়ার জন্য নগদ দেওয়া হচ্ছে।‘‘

তবে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী মোমেন। তাঁর পাল্টা দাবি রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ওই দ্বীপে যাচ্ছেন। তাঁরা যথেষ্ট খুশি। কিন্তু সরকারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রচার চালাচ্ছে।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভাসান চর দ্বীপে রওনা হওয়ার সময় এক রোহিঙ্গার কথায়, ’’শিবিরে থাকা কষ্টের এবং ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে।‘‘ একটু ভালো থাকার আশায় ওই দ্বীপে যাচ্ছি। আরেক শরণার্থীর কথায়, ’’জোরাজুরির ব্যাপার নেই। আমরা স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি।‘‘

তবে সরকারের যুক্তি বা রোহিঙ্গাদের এই প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে একমত নয় কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তাঁদের দাবি সরকার টাকা দিয়ে শরণার্থীদের মুখ বন্ধ করেছে।