নয়াদিল্লি: আর্থিক নিষেধাজ্ঞার ফাঁস গলায় চেপে বসেছে আগেই। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের (United Nations Human Rights Council)  সদস্যপদও হারাল রাশিয়া (Russia Ukraine War)। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন জুড়ে গণহত্যা (Ukraine Massacre) চালানোর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ভোটাভুটি ছিল। অধিকাংশ দেশই রাশিয়াকে বহিষ্কারের পক্ষে ভোট দেওয়ায় সদস্যতা হারাল তারা (Russia Suspended from UNHRC)।তবে বরাবরের মতো এ বারও ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারত। যদিও রাশিয়ার দাবি, বহিষ্কারের ঢের আগেই মানবাধিকার পরিষদ ত্যাগ করে তারা। ২০২৩ সালে এমনিতেই সদস্যতার মেয়াদ ফুরোচ্ছিল। তার আগেই নাম তুলে নেয় ক্রেমলিন।


ভোটাভুটিতে নিরপেক্ষ অবস্থান ভারত, সরাসরি রাশিয়ার পক্ষ নিল চিন


মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিলের দাবি তুলেছিল আমেরিকাই। সেই মতো রবিবার ভোটাভুটিতে অংশ নেয় ১৯৩ সদস্য দেশ। এর মধ্যে ৯৩ দেশ রাশিয়াকে বহিষ্কারের সপক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়াকে বহিষ্কারে সায় দেয়নি ২৪ দেশ। ভোটদান থেকে বিরত থাকে ৫৮ দেশ, যার মধ্যে ভারত অন্যতম। ২০১১ সালে লিবিয়ার পর রাশিয়াই দ্বিতীয় দেশ, যারা রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন থেকে বহিষ্কৃত হল। তবে কোথাও না কোথাও এই ভোটাভুটিতে আন্তর্জাতিক ঐক্যে ফাটল ধরেছে। কারণ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, একতরফা ভাবে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মত একাধিক দেশের।


এ বারেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে ভারত। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে দিল্লিকে। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের দূত টিএস তিরুমূর্তির সাফ যুক্তি, “রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সূচনাপর্ব থেকেই শান্তি, আলোচনা এবং কূটনীতির পক্ষে সওয়াল করে এসেছে ভারত। রক্তপাত, প্রাণহানির মাধ্যমে কোনও সমস্যার সুরাহা হওয়া সম্ভব নয় বলেই বিশ্বাস আমাদের। ভারত যদি কোনও পক্ষ নিয়ে থাকে, তা হল শান্তি এবং অহিংসা।”


আরও পড়ুন: India-China Conflict:বিদ্যুতে ফের চিনা হানা, বেজিংয়ের মদতে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য! রিপোর্ট ঘিরে শোরগোল


রাশিয়ার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ভারতের হয়ে তিরুমূর্তি বলেন, “মানবাধিকার রক্ষার খসড়াপত্র তৈরির সময় থেকেই একেবারে সামনের সারিতে থেকেছে ভারত। আমাদের বিশ্বাস, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিকাঠামোকে সম্মান দিয়েই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক সংগঠনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য, বিশেষ করে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো সংগঠনের জন্য।”


একমাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর সম্প্রতি ইউক্রেনে থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে রাশিয়া। তাদের হাত থেকে বুচা-সহ একাধিক এলাকার দখল নিতে সফল হয়েছে উউক্রেন। আর তার পর থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই সমস্ত এলাকা থেকে ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছে। কোথাও স্তূপাকারে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে বহু মানুষের মৃতদেহ। কোথাও আবার রাস্তার উপর হাত-পা বাঁধা অবস্থআয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য নিথর দেহকে।


রাশিয়ার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, অস্বীকার মস্কোর


তা নিয়েই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সরব হয় ইউক্রেন, আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি। যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। তবে রাশিয়া গোড়া থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে দু’পক্ষের বয়ান শোনা উচিত বলে জানিয়ে এসেছে তারা।


এ ব্য়াপারে চিনের সমর্থন পেয়েছে রাশিয়া। চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, “প্রত্যেক ঘটনার সত্যতা যাচাই হওয়া প্রয়োজন। সব পক্ষকে সংযত হতে হবে। তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা উচিত নয়।” তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের সমালোচনার মুখে পড়ে চিন। চিনের উদ্দেশে বার্তায় হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়, “রুশ সরকার এবং ভ্লাদিমির পুতিনের নীতি প্রচার করতে গিয়ে অন্যায় অবস্থান নিচ্ছে চিন, যা মনে রাখবে ইতিহাস।”


এর আগে প্রতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে বিরত থেকেছে চিন। কিন্তু শুক্রবার নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার পাশেই দাঁড়াতে দেখা যায় তাদের। রাশিয়াকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে ভোট দেয় তারা। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোট হয়নি বলেও অভিযোগ করে চিন।