মস্কো: গ্রেফতারি থেকে জেল-হেফাজতের খাঁড়া ঝুলছে মাথার উপর। সে সবের তোয়াক্কা না করেই যুদ্ধের বিরোধিতা। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একজোটে প্রতিবাদ জানালে সম্প্রচার চলাকালীনই গণ ইস্তফা দিলেন রাশিয়ার একটি খবরের চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা (Russia Ukraine War)। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের ছবি তুলে ধরায় তাদের উপর কোপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রুশ সরকার। তাতেই সম্প্রচার চলাকালীন একজোট হয়ে সব কর্মীরা ইস্তফা দেন। যুদ্ধ থামলে তবেই ফিরবেন বলে জানান (Russia Ukraine War News)। 


রাশিয়ার  মুক্তমনা খবরের চ্যানেল টিভি রেইন-এর (Russia TV Rain) কর্মীরাই এই অভিনব ঘটনা ঘটিয়েছেন। লাগাতার যুদ্ধের খবর তুলে ধরছিলেন তাঁরা। ইউক্রেনে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি হয়েছে, তা তুলে ধরছিলেন দর্শকদের সামনে। তাতে সম্প্রতি ওই চ্যানেলের সম্প্রচার সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় মস্কো। সেই মতো শেষ বার সম্প্রচার চলাকালীন সব কর্মীরা একজোটে ক্যামেরার সামনে হাজির হন। জানান, যুদ্ধের বিরোধিতায় গণ ইস্তফা দিচ্ছেন তাঁরা। যুদ্ধ যদি থামে, ফের দর্শকের সামনে উপস্থিত হবেন। 


ওই চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাতা ন্যাটালিয়া সিন্দেয়েভা সম্প্রচার চলাকালীন বলেন, "যুদ্ধে সায় নেই আমাদের।" তাঁরা ক্য়ামেরার সামনে থেকে সরে যাওয়ার পর 'সোয়ান লেক ব্যালে' ভিডিয়ো দেখানো হয় চ্যানেলে, যা কি না ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছিল। 



আরও পড়ুন: 'প্রাণহানি নিশ্চিত জেনেও রাশিয়াকে আকাশপথে হামলা চালানোর ছাড়পত্র দিচ্ছে ন্যাটো'


যুদ্ধের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিনে রাশিয়ার একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে। তাই টিভি রেইন-এর কর্মীদের গণ ইস্তফার ভিডিয়োটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। বিশিষ্ট লেখক ড্যানিয়েল অ্যাব্রাহামসও সেই ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন নেটমাধ্যমে। ওই  চ্যানেলের তরফে জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। 


দিন দশেক আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের ঘোষণার পর থেকেই দেশে-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাশিয়া। তাদের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলির বিরুদ্ধে সরকারের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে। যে কয়েকটি মুক্তমনা চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশন যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছিল, একে একে সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ফেসবুক এবং টুইটারকেও দেশে নিষিদ্ধ  করেছে মস্কো। তাদের দাবি, রাশিয়াকে ইচ্ছাকৃত ভাবে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হচ্ছে। জানা গিয়েছে,  যুদ্ধবিরোধী অবস্থান থেকে 'ভুয়ো খবর' ছড়ালে বা দেখালে জেল হেফাজতের হুমকিও দেওয়া হয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যমকে।


তাদের এই অবস্থান নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম এবং সত্যের বিরুদ্ধেও রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ আমেরিকার।