কিভ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বড়সড় প্রভাব পড়েছে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও। সম্প্রতি ইউক্রেনের ১১টি রাজনৈতিক দলকে সাসপেন্ড বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার সঙ্গে ওই রাজনৈতিক দলগুলির যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেগুলির মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলিই ছোট এবং ইউক্রেনের রাজনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু ওই তালিকায় রয়েছে ইউক্রেনের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল, অপোজিশন প্ল্যাটফর্ম ফর লাইফ (opposition platform for life)। শেষ নির্বাচনে একটি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল, এখন সে দেশের ৪৫০টি আসনের সংসদে ৪৪টি আসন দখলে রয়েছে তাদের। এই দলটির নেতা ভিক্টর মেদভেদচুক (viktor medvedchuk)। ভিক্টরের সঙ্গে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের 'ভাল' সম্পর্কের কথা প্রায় সর্বজনবিদিত। সাসপেন্ড হওয়ার দলের তালিকায় রয়েছে Nashi (Ours) party। যার প্রধান  ইয়েভহেনি মুরায়েভ (Yevheniy Murayev)। রাশিয়ার হামলার আগেই ব্রিটেনের তরফে ইউক্রেনকে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল ইউক্রেনের সরকারকে সরিয়ে ইয়েভহেনি মুরায়েভকে প্রেসিডেন্ট পদে বসাতে চায় রাশিয়া। 


গত রবিবার একটি ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে এই কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  


কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কেন?
এই বিষয়টি বুঝতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কয়েকটা বছর। ২০১৪ সালের আগে ইউক্রেনের রাজনীতিতে একটি শিবির সক্রিয় ছিল যারা রাশিয়াপন্থী ছিল। অর্থাৎ, ইউরোপ-আমেরিকার শিবিরের বদলে রাশিয়ার নেতৃত্বে থাকা অর্থনৈতিক শিবিরে থাকুক ইউক্রেন, এমনটাই চেয়েছিল। কিন্তু, ২০১৪ সালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তারপর রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ও ডনবাস এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ফলে ইউক্রেনের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে রাশিয়াপন্থী এই শিবির। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এরপর থেকে যত সময় গিয়েছে ততই 'রাশিয়াপন্থী' (Pro Russia) কথাটির ব্যাপ্তি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকসময় পশ্চিম-বিরোধী, নিরপেক্ষ অবস্থান বা বাম মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক শক্তিগুলিকেও রাশিয়াপন্থী হিসেবে দেগে দেওয়া হয়েছে। 


এর আগেও অপোজিশন প্ল্যাটফর্ম ফর লাইফ (opposition platform for life) দলের নেতা ভিক্টর মেদভেদচুকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল জেলেনস্কি সরকার। দলটিকে রাশিয়াপন্থী বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, এই দলটি রাশিয়ার (Russia) হামলার বিরোধিতা করেছে এবং দলের সদস্যদের ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগদানের ডাক দিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবর। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সংবাদমাধ্যমে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতেই এমন সিদ্ধান্ত জেলেনস্কি সরকারের।


আরও পড়ুন: ২৫০০ শিশুকে অপহরণ করেছে রাশিয়া! ইউক্রেনের দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য, হিটলারের সঙ্গে তুলনা পুতিনের