মস্কো: যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই চলছে দুই অসম শক্তির মধ্যে, যার সাক্ষী গোটা বিশ্ব (Russia Ukraine War)। রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দু’তরফেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমাহীন। কিন্তু সবদিক থেকে ক্ষমতায় বেশি রুশ সেনার সামনে পড়ে ক্ষতবিক্ষত ইউক্রেন (Russia Ukraine War News)। ইউক্রেনীয় সেনার স্পেশাল ইউনিটের প্রায় ২০০ সৈনিক তাদের হাতে মারা গিয়েছে বলে জানাল রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউক্রেনের মাটিতে গড়ে ওঠা ২১১টি সামরিক পরিকাঠামো তারা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে বলেও জানাল।


শুক্রবার সকালেই রাশিয়া জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের মাটিতে গড়ে ওঠা ১১৮টি সামরিক পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। কিন্তু রাতে দ্বিতীয় দিনের হিসেব নিকেশ দিতে গিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ জানান, সারা দিনে আরও ৯৩টি সামরিক পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দিয়েছে তাঁদের সেনা।


শুধু তাই নয়, পশ্চিমি দেশ থেকে ইউক্রেনের হাতে পৌঁছনো বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের ভাণ্ডারও তারা বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকার পাঠানো জ্যাভলিন অ্যান্টি ট্যাঙ্ক  ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিও। এই মুহূর্তে তিন দিক থেকে কিভ ঘিরে ফেলে ভিতরে ঢুকে পড়েছে রাশিয়া। সেখানে গোস্তোমেল বায়ুসেনা  ক্ষেত্রটিও দখল করে নিয়েছে তারা। সেখানে ইউক্রেনীয় সেনার বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত স্পেশাল ইউনিটের ২০০ সৈনিক তাদের হাতে মারা গিয়েছ বলে দাবি মস্কোর।


এ ছাড়াও, সেনা অভিযানের শুরুতেই চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্র দখল করে নেয় রাশিয়া। তার দুই ধারের সেনা শিবিরও এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। সেখানে যৌথ ভাবে চেরনোবিলের নিরাপত্তা রক্ষায় দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে বলে দাবি রাশিয়ার। যদিও ইউক্রেনের দাবি, চেরনোবিলের ৮০-র বেশি কর্মীকে পণবন্দি করে রেখেছে রুশ সেনা।


শনিবার সকালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাব ভেটো প্রয়োগ করে আটকে দিয়েছে রাশিয়া। তার আগে রাতে দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানে দেশের সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘‘ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষের মুখে পড়তে হচ্ছে না রুশ সেনাকে। বরং জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গেই সংঘর্ষ চলছে।’’ পুতিনের দাবি, পশ্চিমি দেশগুলির সহায়তায় ওই সমস্ত সংগঠন কিভ, খারকভে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, রকেট লঞ্চার এনে জড়ো করেছে।  


আরও পড়ুন: Russia Ukraine War: রাষ্ট্রপুঞ্জে এক অবস্থান ভারত-চিনের, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদান থেকে বিরত দুই দেশই


রাশিয়ার এই অবস্থানের কড়া নিন্দা করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডার মতো দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুতিনের দাবি, ইউক্রেন দখল করার কোনও অভিসন্ধিই নেই তাঁদের, বরং সরাসরি ইউক্রেনীয় সেনার সঙ্গে সন্ধিস্থাপনের পথে এগোতে চান তাঁরা। অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে ইউক্রেনীয় সেনার দেশের রাশ হাতে তুলে নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করে রাশিয়া।


তবে গোলাগুলি বর্ষণে ইতি না পড়লেও, রাশিয়া-ইউক্রেন, দু’পক্ষই আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। তার জন্য বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে নিজের প্রতিনিধিদের পাঠাতে সম্মত হয়েছেন পুতিন। ওই প্রতিনিধি দলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি দফতরের আধিকারিকরা থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি পোল্যান্ডের ওয়ারশ-তে আলোচনায় বসার পক্ষপাতী। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের দাবি, ওয়ারশ-র প্রসঙ্গ তোলের পর থেকে আলোচনা নিয়ে আর কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না জেলেনস্কি। যদিও কিভ জানিয়েছে, কোথায়, কোন দিন আলোচনায় বসা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে, যা একান্তই প্রয়োজন বলে মত জেলেনস্কির প্রেস সচিব সেরহি নিকিফোরভ।