কিয়েভ: ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির আশঙ্কাই সত্যি হল। দিনভর লড়াইয়ের পর চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের দখল নিল রাশিয়া (Russia Captures Chernobyl)। সে দেশের রাষ্ট্রপতি ভবনের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোল্যাক রাতে এমন ঘোষণা করলেন (Russia Ukraine War)। তিনি বলেন, "চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র নিরাপদে রয়েছে, তা আর বলার উপায় নেই। কোনও সুযোগ না দিয়েই, আক্রমণ করে তা দখল করে নিয়েছে রুশ সেনা। এই মুহূর্তে ইউরোপের কাছে এর চেয়ে বড় বিপদ কিছু হতে পারে না। "


স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার তিন দিক থেকে সীমান্ত পার করে ইউক্রেনে ঢোকে রুশ বাহিনী। বেলারুশ থেকে একটি বাহিনী সটান এসে চেরনোবিলে উপস্থিত হয়। তাদের সামনে কার্যত টিকতেই পারেনি ইউক্রেনীয় সরকার। ফলে সহজেই চেরনোবিল দখল করে নেয় রুশ সেনা। 


রুশ সেনাসূত্রে জানা গিয়েছে, ইউক্রেনে ঢোকার আগেই এ দিন চেরনোবিলের 'এক্সক্লুসিভ জোন'-এ জমায়েত করতে শুরু করে দেয় রুশ সেনা। তাদের দাবি চেরনোবিলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে চায় মস্কো, যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করতে না পারে ন্যাটো এবং আমেরিকা।


এ দিন সন্ধের দিকেই যদিও চেরনোবিল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রুশ সেনা চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে (Chernobyl Disaster) পৌঁছে গিয়েছে বলে জানান তিনি। জেলেনস্কি জানান, ১৯৮৬-র ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছে তাঁর দেশের সেনা। কিন্তু রাশিয়া চেরনোবিলের দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু ইউক্রেন নয়, রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ গোটা ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণারই সমান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চেরনোবিল দখল করে রাশিয়া। 


আরও পড়ুন: Russia Ukraine War: আত্মরক্ষায় আক্রমণ হানা ছাড়া উপায় ছিল না, সমালোচনা উড়িয়ে বললেন পুতিন


পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম পারমাণবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল চেরনোবিল। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে সেখানকার চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, যা গ্রাস করে ফেলে দেড় লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চলে। হিরোশিমা-নাগাসাকির তুলনায় চেরনোবিল থেকে ৫০০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় বলে জানা যায়।  রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ এমনকি চিন এবং আমেরিকাতেও তার প্রভাব টের পাওয়া গিয়েছিল।


ওই দুর্ঘটনার প্রভাবে উত্তর ইউরোপের বায়ুমণ্ডলে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। সুইডেনের পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নিজেদের দেশেই কিছু ঘটেছে বলে প্রথমে ধারণা জন্মায় তাদের।  তাই তড়িঘড়ি সুইডেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায় চেরনোবিলে বিপর্যয় ঘটেছে। 


তবে আজও চেরনোবিলের ধ্বংসস্তূপ পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি। এখনও সেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ রয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। সব কিছু পরিষ্কার করে ২০৬৫ সালের আগে সম্পূর্ণ ভাবে সেটিকে নিরাপদ ঘোষণা করা সম্ভব নয় বলে দাবি তাঁদের।