কিভ: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, প্রাণ যায় উলুখাগড়ার। রাশিয়াকে (Russia Ukraine War) রুখতে এই প্রবাদকেই বেছে নিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy)। সরাসরি রাশিয়ার নারীসমাজের দ্বারস্থ হলেন তিনি। হাতজোড় করে সকলকে অনুরোধ করলেন, “দয়া করে নিজের সন্তানকে যুদ্ধে পাঠাবেন না।”
এই মুহূর্তে ইউক্রেনের রাজধানী কিভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনা। ইউক্রেনকে দুরমুশ করতে দেশের বাইরে থেকেও তারা সেনা নিয়োগ করছে বলে অভিযোগ। সেই পরিস্থিতিতেই এমন কাতর আর্জি জানান জেলেনস্কি। শুক্রবার রাষ্ট্রীয় ভাষণে রুশ মহিলাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমস্ত মাকে বলব, বিশেষ করে বাধ্যতামূলক ভাবে যাঁদের সন্তান যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, দয়া করে ভিন্ দেশে সন্তানকে যুদ্ধে পাঠাবেন না।”
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দু’সপ্তাহ অতিক্রম করেছে। কিন্তু রাশিয়ার সিংহভাগ মানুষই এখনও বাস্তব থেকে অনেক দূরে বলে খবর। পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ভুয়ো প্রচার চালিয়ে দেশের নাগরিকদের মগজধোলাই করে চলেছে ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) সরকার, যাতে রুশ আগ্রাসনের কথা মাথাতেই না আসে তাঁদের। যুদ্ধ, হাজার হাজার প্রাণহানির জন্য সরকারকে দায়ী না করেন কেউ। এমনকি যুদ্ধে যাওয়ার কথা না জানিয়েই, হাজার হাজার যুবককে রুশ সেনাবাহিনীতে সামিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War Live Updates 12 March: ইউক্রেনের উপর লাগাতার আক্রমণ রাশিয়ার, নিশানায় শিল্পক্ষেত্র
জেলেনস্কিও তেমনটাই দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “মহড়া বা প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সম্মুখসমরের কোনও যোগ নেই, এসব বলে ভুল বোঝানো হতে পারে। কিন্তু ওদের কথা বিশ্বাস করবেন না। বরং ইউক্রেনে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করুন।” গত সপ্তাহে রুশ মায়েদের একাংশকে কিভে এনে বন্দি ছেলেদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগও দেয় ইউক্রেন সরকার।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন পুতিন। তার পর দু’সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনও ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত নেই। উদ্ধারকার্ চালাতে যা-ও বা সাময়িক যুদ্ধবিরতি পালন হচ্ছে, তার মধ্যেও বোমা-গুলি চলছে বলে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে আসছে।
নিজের সিদ্ধান্তের যদিও কড়া মাসুল দিতে হচ্ছে রাশিয়াকে। আমেরিকা-সহ বিশ্বের তাবড় দেশ তাদের উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। রাশিয়া থেকে ব্যবসা তুলে নিয়েছে একে একে বহু সংস্থা। তা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। পুতিনের সাফ যুক্তি, রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ইউক্রেনকে বোড়ে হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না আমেরিকা এবং ন্যাটোর। এই যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতিও ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা-ও পিছু হটতে নারাজ পুতিন। বরং ইউক্রেনকে দুরমুশ করতে দেশের যুবদের যুদ্ধে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে তাঁর সরকার।
এর আগে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানায়, দু’,সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধে ২ থেকে ৩ হাজার রুশ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে।