রিয়াধ: আরব দুনিয়ায় বড়সড় কূটনৈতিক সংকট। সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে  সব রকমের সম্পর্ক ছেদ করল সৌদি আরব, বাহরেইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং ইয়েমেন।


সৌদি আরব সহ ওই দেশগুলির অভিযোগ, এই অঞ্চলকে অস্থির করে তুলতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিচ্ছে দোহা। এই সংগঠনগুলির মধ্যে একটি ইরানের। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতার এই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করেছে। দোহার অভিযোগ, এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে উপসাগরীয় দেশগুলি তাদের কব্জায় রাখতে চাইছে।

শুধু কাতার বা তার নাগরিকদের ওপরই নয়, এই কূটনৈতিক সংকটের ফলাফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি পশ্চিমী দেশগুলির স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়েও প্রভাব পড়তে পারে এই ঘটনার।

কাতারেই রয়েছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মার্কিন বিমানঘাঁটি। আইএসআইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের ক্ষেত্রে এই ঘাঁটির গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও ২০২২-এ ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে কাতারেই।

কয়েক দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবে এসে ইসলামিক দেশগুলিকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই বার্তার কয়েক দিনের মধ্যেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের এই সিদ্ধান্ত।

কাতারের সঙ্গে এর আগেও প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। কাতার আল-কায়দা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলিতে লাগাতার মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে আরবের বিভিন্ন দেশ। কাতার পাল্টা তাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রচার ও তাদের দেশের সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তোলে।

উপসাগরীয় দেশগুলি ও মিশর জানায়, তারা কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং পরিবহণ যোগাযোগ বন্ধ করেছে। কাতার পণ্য আমদানির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলির ওপর নির্ভরশীল।

প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে কাতারে আতঙ্কিত মানুষজন প্রয়োজনীয় সামগ্রী আগেভাগে মজুত রাখতে কেনাকাটা শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

উপসাগরীয় দেশগুলি তাদের নাগরিকদের কাতারে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে এবং ১৪ দিনের মধ্যে কাতারের নাগরিকদের দেশ ছেড়ে যেতে বলেছে।

সৌদি আরব বলেছে, সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিপদ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিয়াধের আরও অভিযোগ, তাদের ও বাহরেইনের সিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে অশান্তি ছড়ানোর জন্য ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গিকার্যকলাপকে সমর্থন দিচ্ছে কাতার।

কাতার আগেও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিন দোহা বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলি সম্পর্কচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ অযৌক্তিক এবং মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। সেটা হল কাতারকে কব্জায় নিয়ে আসা।

ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট সরকার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইয়েমেনে লড়াই করছে। এই লড়াই থেকেও কাতারকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে ইয়েমেন।

কূটনৈতিক সংকটের অর্থনৈতিক ফল অবিলম্বেই পড়েছে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিমান পরিবহণ সংস্থা কাতার থেকে বা কাতারগামী উড়ান স্থগিত করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, কাতারের সঙ্গে ওই দেশগুলির ঘাতপ্রতিঘাত নতুন নয়। এর আগে ২০১৪ সালে দেশগুলি কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছিল।

এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসন বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলিকে আলোচনায় বসে মতপার্থক্যের অবসান ঘটাতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, উপসাগরীয় দেশগুলির সিদ্ধান্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও প্রভাব ফেলবে না।

উল্লেখ্য, কাতারের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলির সংঘাত চরম আকার ধারণ করে গতমাসে ট্রাম্পের সফরের পর একটি ঘটনায়। কাতারের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইটে  কিছু কটূক্তি কাতারের আমির করেছিলেন বলে অভিযোগ।যদিও দোহা দাবি করে, ওই মন্তব্যগুলি আদৌ করেননি আমির। এটা ওয়েবসাইট হ্যাক করে এই কাজ করা হয়েছে। এই হ্যাকিংয়ের তদন্তের নির্দেশও দেয় কাতার সরকার।

কিন্তু কাতারের দাবি মানতে চায়নি বিভিন্ন আঞ্চলিক দেশগুলির মিডিয়া অর্গানাইজেশনগুলি। এর জেরে কাতারের প্রতিটি সংবাদ সংস্থার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় বাহরেইন, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইয়েমেন। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি কাতারের রাজধানী দোহা ভিত্তিক স্যাটেলাইট নিউজ নেটওয়ার্ক আল-জাজিরাও।

রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবে মানব সম্পদ উন্নয়ণে আরব দুনিয়ায় সবার উপরে কাতার। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের সম্ভারে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কাতার। সেই সঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী দেশ কাতার। কাতারের প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত বড়সড় কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।