লাহোর: পানামা পেপার্স মামলায় পাক সু্প্রিম কোর্টে আজীবন প্রধানমন্ত্রী পদের অযোগ্য সাব্যস্ত হওয়া নওয়াজ শরিফ প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় বলে জানালেন। ‘রাষ্ট্র-বহির্ভূত’ লোকজনকে সীমান্ত পেরিয়ে মুম্বই ঢুকে লোকজনকে ‘খুন করার’ অনুমতি দেওয়ার নীতির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষমতাচ্যুত শরিফ।
কোনও পাক প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের কথা আগে বলতে শোনা যায়নি। শরিফ পাকিস্তানের ডন সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, আমরা নিজেরাই নিজেদের একঘরে করে তুলেছি। অনেক বলিদান সত্ত্বেও আমাদের বক্তব্য কেউ গ্রহণ করে না। আফগানিস্তানের কথা মানা হয়, কিন্তু আমাদেরটা নয়। আমাদের এটা খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি অবশ্য মুম্বই হামলার মাথা হাফিজ সঈদ ও মৌলানা মাসুদ আজহারের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী যথাক্রমে জামাত-উদ-দাওয়া ও জয়েশ-ই-মহম্মদের নাম করেননি, যারা নির্বিচারে পাকিস্তানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শরিফ স্পষ্ট বলেন, ওদের রাষ্ট্র-বহির্ভূত শক্তি বলা হয়। ওদের কি সীমান্ত অতিক্রম করে মুম্বই ঢুকে ১৫০-র বেশি মানুষ মেরে ফেলতে দিয়ে ঠিক হয়েছে? আমায় বোঝান। কেন ওদের বিচার সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না? প্রসঙ্গত, মুম্বই জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত মামলার বিচার আটকে রয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবাদ দমন আদালতে।

শরিফ এও বলেন, রাষ্ট্র-বহির্ভূত লোকজনকে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালাতে দেওয়া একেবারই মেনে নেওয়া যায় না। প্রেসিডেন্ট পুতিন এটা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও বলেছেন। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’, ‘মিথ্যাচার ও প্রতারণা’ ছাড়া আমেরিকাকে কিছুই দেয়নি বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের উল্লেখও করেন শরিফ।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ছেলের কোম্পানি থেকে বেতন নিলেও ২০১৩ সালে তা প্রকাশ না করায় ‘সততা, সঠিক রাস্তায় না থাকা’র জন্য শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য বলে জানায় পাক সু্প্রিম কোর্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ-এর প্রধান পদেও বাতিল ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত।

সামরিক ও বিচার বিভাগের উল্লেখ করে শরিফ বলেন, দু-তিনটি সমান্তরাল সরকার থাকলে দেশ চালানো যায় না। শুধু সংবিধান স্বীকৃত সরকারই কাম্য।
২০১৬ থেকেই পাকিস্তানে সেনা ও শরিফ সরকারের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। শরিফ প্রশাসন সেনাকে জানিয়ে দেয়, দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা না হলে আন্তর্জাতিক স্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে।

প্রসঙ্গত, মুম্বই হানা মামলা ১০ বছরে পড়লেও পাকিস্তানে এ পর্যন্ত তার কোনও অভিযুক্তই দোষী ঘোষিত হয়নি, সাজা পায়নি, যা থেকে স্পষ্ট, বিষয়টি কখনই তাদের অগ্রাধিকার, গুরুত্বের তালিকায় নেই।
মামলার সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে একাধিক পাকিস্তানি, কিন্তু পাক কর্তৃপক্ষের লাগাতার দাবি, মামলার চূড়ান্ত রায়ে পৌঁছনোর জন্য ভারত থেকে সাক্ষীদের পাঠাতে হবে।