দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে চিনের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সংঘর্ষ দীর্ঘদিনের। এই সাগরের প্রায় ৯০ শতাংশই নিজেদের দখলে রেখেছে বেজিং। ১৯৪০ সালে মানচিত্রে ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-এর মাধ্যমে এই সাগরের একাধিপত্য কায়েম করে চিন।
তাদের দাবি ছিল, বহু শতক ধরে এই সাগরে চিনা মৎস্যজীবীরা সেখানে জীবিকা অর্জন করছেন। এরপর নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে প্রবালপ্রাচীরগুলিতে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে তাকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করে বেজিং। পাশাপাশি, পারাসেল দ্বীপ ও হাইনানে বহু সামরিক মহড়াও করে আসছে চিন।
১৭ বছর ধরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয় ফিলিপাইন্স। তাদের দাবি, গায়ের জোরে দক্ষিণ চিন সাগর দখল করে রেখেছে বেজিং।
ম্যানিলা অভিযোগ করে, চিনের এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক জলসীমা আইন (ইউএনক্লস) লঙ্ঘন করেছে। ফিলিপাইন্সের পাশাপাশি চিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অংশগ্রহণ করে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই এবং তাইওয়ান।
আন্তর্জাতিক প্যানেলকে খারিজ করতে বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছে চিন। এর জন্য বিভিন্ন দেশকে পাশে পাওয়ারও চেষ্টা চালিয়েছে তারা। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের উদ্দেশ্যে তারা হুমকি দিয়ে জানিয়েছে, যে হেগ-এর কোনও এক্তিয়ার নেই বহুদেশকে ঘিরে থাকা একটি সমস্যা নিয়ে রায় দেওয়ার।
যদিও, এদিন স্থায়ী আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায় চিনের বিরুদ্ধে যায়। আদালতের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল জানিয়েছে, ‘নাইন ড্যাশ লাইন’-এর ঐতিহাসিক অধিকার ফলানোর কোনও আইনি ভিত্তি নেই চিনের।
যদিও, এই রায়কে সরাসরি খারিজ করেছে বেজিং। এদিন রায় প্রকাশ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই চিনের বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা এই রায়কে গ্রহণ বা মান্যতা দিচ্ছে না। তাই এই রায় তারা মানতে বাধ্য নয়। তারা আরও জানিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগরের একক অধিকার রয়েছে চিনের। আর সেই সার্বভৌমত্ব থেকে তারা পিছিয়ে আসবে না।
অন্যদিকে, রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিপাইন্স। সেদেশের বিদেশ সচিব পারফেক্টো ইয়াসে জানান, রায় ভাল করে পড়ে তবেই বিশদে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।