কলম্বো: ২১.০৪.২০১৯। রবিবার। ইস্টার সানডে। দ্বীপরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই সবথেকে কলঙ্কময় দিন। গৃহযুদ্ধের স্মৃতি একটু একটু করে আবছা হতে শুরুই করেছিল। এরই মধ্যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কার ক্ষত জায়গায় ফের আঘাত হানল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। একই সময়ে ৬ জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আরও ২ বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ২৯০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জন ভারতীয়। সিংহভাগই কর্নাটকের বাসিন্দা। এবং সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীও বটে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০। নিখোঁজ বহু।
শ্রীলঙ্কায় এই বিস্ফোরণ কারা করল? তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান উগ্র ইসলামিক সংগঠন ‘ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত’ এই নাশকতার নেপথ্যে রয়েছে। যদিও এখনও কোনও সংগঠনই এই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের দায় নেয়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে ইস্টার সানডে-তে যে ৮টি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তাতে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল ৭ জন সুইসাইড বম্বার। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তে সহোযগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইন্টারপোল। রাষ্ট্রসংঘের তদানীন্তন এই সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল জুরগেন স্টক ট্যুইট করে জানিয়েছেন, ইন্টারপোল এই ভয়ঙ্কর নাশকতার কড়া নিন্দা করছে এবং দেশের তদন্তকারী সংস্থাকে যে কোনও ধরনের সাহায্য করতে তাঁরা প্রস্তুত।
তবে এই ঘটনার পর সে দেশের অভ্যন্তরেই অনেকে প্রশ্ন তুলছে, এত বড় নাশকতার আগে গোয়েন্দারা কেন আগাম কোনও খবর পেল না? আর যদি সতর্কবার্তা পেয়েও থাকে, তাহলে কেন সেই মতো পদক্ষেপ নিল না তাঁরা? এমন অবস্থায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি মৈথিরিপালা সিরিসেনা। রবিবার রাতে কার্ফু জারি করার পর সোমবারই বৈঠকে বসে দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল। ওই বৈঠকেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পক্ষে সওয়াল করা হয়। এবং বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতি দেশে ‘ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সারা দেশে শোকদিবস পালনের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এই পরিস্থিতির মধ্যেই আরও ৮৭টি ‘ডিটোনেটর’ উদ্ধার করেছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। প্রথমে একটি খেলার মাঠ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় ১২টি ‘ডিটোনেটর’ উদ্ধার করে তাঁরা। পরে বিভিন্ন জায়গা তল্লাশি চালিয়ে আরও ৭৫টি ‘ডিটোনেটর’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় শ্রীলঙ্কার পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী আর বিক্রমসিংহে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস দমনে সমস্ত রকম পদক্ষেপ করবে তাঁর সরকার। প্রয়োজনে দেশের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাবে। এমনকী, ব্যবহার করা হবে প্রতিরক্ষা বাহিনীকেও।
প্রসঙ্গত, কলম্বোর সেন্ট অ্যান্থনি, পশ্চিম উপকূলের নেগোম্বোর সেন্ট সেবাস্তিয়ান সহ শহরের আরও একাধিক গির্জা ও পাঁচতারা হোটেলে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের ৪ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আলাদা করে দেওয়া হবে ৪০ হাজার টাকা। আহতদের ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার।