কলম্বো: দেওয়াল জুড়ে পেল্লাই আকারের কাঠের আলমারি। মাঝখানে আয়না লাগানোর জায়গা। দুই দিকে জামা-কাপড় রাখার জায়গা। প্রেসিডেন্ট বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন আগেই। খালি করে নিয়ে গিয়েছেন আলমারিও। কিন্তু আলমারির ডানদিকের দরজা খুলতেই মিলল গুপ্তধন, থুড়ি গোপন সুড়ঙ্গের হদিশ। লম্বালম্বি নেমে গিয়েছে সিঁড়ি। নিচে নেমে ডানদিকেই রয়েছে একটি ঘর। টানটান রহস্যগল্প বা হিটলারের জার্মানি নিয়ে লেখা বইয়ে মাটির নিচে ঠিক যেমন নিরাপদ আশ্রয়ের বর্ণনা ভেসে উঠত চোখের সামনে। তবে গল্পকথাও নয়, আবার পশ্চিমের কোনও দেশের যুদ্ধকালীন বর্ণনাও নয়, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে তপ্ত শ্রীলঙ্কায় (Sri Lanka Crisis) প্রেডিডেন্টের বাসভবনে হদিশ মিলল এমন গোপন বাঙ্কারের (Gotabaya Rajapaksa)। 


শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গোপন বাঙ্কার


বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা সরকার কয়েক দিন আগেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। তার উপর আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের কাছ থেকে আরও ৩০০ কোটি ডলার ধার নিয়ে আপাতত দেশে খাদ্যসঙ্কট সামাল দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় তারা। তাতেই দ্বীপরাষ্ট্রে নতুন করে আগুন জ্বলে উঠেছে। শনিবার থেকে যত সম এগোচ্ছে, ততই ছড়িয়ে পড়ছে সেই আগুন। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণার পর রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের নিজস্ব বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। শহরের মধ্যিখানে আগুনের সেই লেলিহান শিখার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছিল নেটমাধ্যমে। 



তার মধ্যেই সামনে এল প্রেসিডেন্ট ভবনে খুঁজে পাওয়া গোপন বাঙ্কারের ছবি এবং ভিডিও। খালি আলমারির দরজা খুলতেই দেখা যায়, সুড়ঙ্গ বরাবর নেমে গিয়েছে সিঁড়ি। রয়েছে আলোর ব্যবস্থাও। সেই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে চোখে পড়ে সুসজ্জিত ঘর, আরামে লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থা। বিক্ষোভকারীরা সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে খুঁজে পাওয়া কয়েক লক্ষ টাকার কথাও প্রকাশ করেছেন (Gotabaya Secret Bunker)। 


আরও পড়ুন: Sri Lanka Crisis : দেশের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ, চরম দুশ্চিন্তায় কলকাতায় পড়তে আসা শ্রীলঙ্কার পড়ুয়ারা


নতুন করে অশান্তি মাথাচাড়া দেওয়ার পর, শুক্রবার রাতেই প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছেড়ে কার্যত পালিয়ে বাঁচেন গোতাবায়া। মূলত তাঁর পদত্যাগের দাবিতেই রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ বিক্ষোভকারী। তাই বিপদ বুঝেই তিনি সরে পড়েন বলে জানা যায়। এই মুহূ্র্তে তিনি দেশের অন্দরেই কোনও অজ্ঞাত আশ্রয়ে রয়েছেন, নাকি বিদেশ চলে গিয়েছে, সেই তথ্য যদিও অধরা। তবে বিক্ষোভ বিরাট আকার ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন রনিলও। সর্বদলীয় সরকার গড়ে তোলার কথা শোনা যায় তাঁকে বলতে। 


তবে হাতের কাছে কাউকে না পেয়ে, সরকারি সম্পত্তিরই দখল নিতে দেখা গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। প্রেসিডেন্ডের বাসভবনে ঢুকে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা থেকে, গেমরুমে ঢুকে ক্যারাম, জিমে শরীরচর্চা থেকে বৈঠকখানায় আরাম, সবের ছবি এবং ভিডিও ছেড়েছেন তাঁরা। তার মধ্যেই এই গোপন বাঙ্কারের হদিশ মিলল। 


চরম সঙ্কটজনক পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কায়


চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরেই শ্রীলঙ্কার এই পরিস্থিতি। দেশের কোষাগারে সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রা শূন্যে এসে ঠেকেছে। ফলে খাদ্যপণ্য থেকে প্রায় সবকিছুর জন্য বিদেশি আমদানির উপর নির্ভরশীল শ্রীলঙ্কায় চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ভাত-ডালটুকুও জুটছে না সাধারণ মানুষের। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জোগানের আকাল দেখা দিয়েছে। তাতে সরকারি অব্যবস্থা এবং দুর্নীতির উপরই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের।