কলম্বো: অর্থনৈতিক সঙ্কটে জেরবার পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka Crisis)। নিত্য পণ্যের দাম সেখানে আক্ষরিক অর্থেই আকাশ ছুঁয়েছে (Price Rise)। তার জেরে থাকা-খাওয়ার জোগান দিতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন সেখানকার মানুষ। কয়েক দিন আগে পর্যন্ত দোকানের বাইরে লম্বা লাইন চোখে পড়ছিল। কিন্তু এখন চারিদিক ধূ ধূ করছে। হয় দোকানেই পণ্য নেই, নয়ত বা তা কেনার মতো পয়সা পকেটে নেই সাধারণ মানুষের। ফলে কার্যত অনাহারেই দিন কাটছে দেশের একটি বড় অংশর মানুষের (Food Crisis)।


হয় দোকানে পণ্য নেই, নয়ত বা তা কেনার পয়সা নেই পকেটে


স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় চালের ন্যূনতম দাম ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১ কেজি চাল কিনতে সেখানে ২২০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গম বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৯০ টাকা কেজি দরে। কেজিতে ২৪০ টাকা দাম রাখা হয়েছে চিনির। নারকেল তেলের দাম পৌঁছেছে প্রতি লিটারে ৮৫০ টাকায়। একটি ডিম কিনতে সেখানে ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে গ্রাহককে।


শুধু তাই নয়, প্রাপ্তবয়স্করা অল্প খেয়ে শিশুদের মুখে খাবারের জোগান দেবেন যে, সেই অবস্থাও নেই। কারণ সেখানে প্রতি কেজি গুঁড়ো দুধের দাম পৌঁছেছে ১৯০০ টাকায়। সবজি সেদ্ধ করে খাওয়ার উপায়ও নেই। কারণ বিগত কয়েক সপ্তাহের সবজির দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণ, ত্রিগুণ থেকে প্রায় চতুর্গুণ হয়ে গিয়েছে।


আরও পড়ুন: PM Imran Khan Speech: অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ ডেপুটি স্পিকারের, আপাতত গদি বাঁচল ইমরান খানের


শ্রীলঙ্কায় গত ফেব্রুয়ারি মাসেই খুচরো ব্যবসায় মুদ্রাস্ফীতি ১৭. ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হার ২৫ শতাংশ। তার জেরে চাল, ডাল, গম এবং সবরকমের শস্যদানা, যা কিনা জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক, তার কিছুই ছোঁয়া যাচ্ছে না।তার উপর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে ওষুধ এবং গুঁড়ো দুধের জোগানে ঘাটতি ঘিরেও।


এমন পরিস্থিতিতে দেশের সরকারের উপরই ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে সাধারণ নাগরিকের। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। রাজধানী কলম্বোও বিক্ষোভে উত্তাল। খাদ্য সঙ্কটের জন্য রাজাপক্ষ সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। ৩৬ ঘণ্টার কার্ফুও বসানো হয়েছে। কিন্তু সরকার বিরোধী ক্ষোভে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে।


বর্তমান সঙ্কটের নেপথ্যে যে যে বিষয় দায়ী


কিন্তু পরিস্থিতি এত সঙ্কটজনক হয়ে উঠল কেন? এর সপক্ষে নানা যুক্তি উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সরকার অর্থনীতি সামলাতেই পারেনি। তার জন্য বাজেটে ঘাটতি তো বটেই, অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘাড়ে চেপে বসেছে। তাতে গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে ওঠে রাজাপক্ষ সরকারের কর নীতি। কারণ ২০১৯ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিপুল করছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজাপক্ষ। ক্ষমতায় এসে সেই প্রতিশ্রুতিপূরণে উদ্য়োগী হন তিনি। কিন্তু তার পরই কোভিডের প্রকোপ নেমে আসে। পলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।


পর্যটন থেকে বিপুল লাভ ঘরে তোলে শ্রীলঙ্কা সরকার। কিন্তু অতিমারিতে তার উপরও প্রভাব পড়ে। সেখানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতনেও কোপ পড়ে। ফলে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় শ্রীলঙ্কার। পর্যটন ব্যবসার উপরও তার প্রভাব পড়ে। একই সঙ্গে চিনের থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝাও দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। কারণ গচ্ছিত বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ই গত দু'বছরে ৭০ শতাংশ নেমে যায়। এ ছাড়াও, ২০২১ সালে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন রাজাপক্ষ। পরে যদিও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু তত দিনে কৃষিকার্যে বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। 


এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কোষাগারে ২৩১ কোটি ডলার ঋণের বোঝা ছিল। কিন্তু তাদের ঋণের বোঝাই ৪০০ কোটি ডলার। ইন্টারন্যাশনাল সভরেঁ বন্ডে ১০০ কোটি ডলারের ঋণের পাশাপাশি, এশিয়ান জেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, জাপান এবং চিনের থেকেও ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তা নিয়ে গত মাসেই বিপদের বার্তা শুনিয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার। ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানানো হয়।