কলম্বো: দাউদাউ করে জ্বলছে পৈতৃক ভিটে। আগুনে ছাড়খার চারিদিক। সেই অবস্থায়  কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচছেন শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka Crisis) সদ্য প্রাক্তন মহিন্দা রাজাপক্ষে (Mahinda Rajapaksa)।  দেশের নৌসেনার একটি ঘাঁটিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাজাপক্ষে মাথা গুঁজে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই খবর চাউর হতে অশান্তি আরও চরমে উঠেছে।


বিক্ষোভ থেকে মাথা বাঁচাচ্ছেন রাজাপক্ষেরা!


শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছাড়ার পর রাজাপক্ষে এবং তাঁর পরিবারকে অজ্ঞাত নৌসেনা ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি চাউর হতেই অশান্তি চরমে ওঠে। ত্রিঙ্কোমালি নৌসেনা ঘাঁটির সামনে হাজির হয় বিক্ষোভকারীদের দল। রাজাপক্ষে এবং তাঁর পরিবারকে বার করে আনার দাবি জানাতে থাকেন। যদিও তাঁরা আদৌ সেখানে রয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।


এ বছরের গোড়া থেকেই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরাল হয়ে উঠছিল (Sri Lanka Violence)। গোতাবায়া এবং মহিন্দা, দুই রাজাপক্ষ ভাইয়ের ভুল নীতিতে দেশের অর্থনীতি তলানিতে এসে পৌঁছয় বলে অভিযোগ তোলেন বিরোধী শিবিরের নেতা থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই। নিত্য প্রয়োজনের চালের দাম কেজিতে ২২০ টাকা, ১৯০ টাকা কেজি দরে গম, ২৪০ টাকা কেজি দরে চিনি, ৮৫০ টাকা প্রতি লিটারে নারকেল তেলের দাম পৌঁছয়। একটি ডিমের দাম পৌঁছয় ৩০ টাকায়। গুঁড়ো দুধের দাম ১৯০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেয়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কা কখনও এমন সঙ্কটের মধ্যে পড়েনি।


আরও পড়ুন: Srilanka Clash: শ্রীলঙ্কায় সংঘর্ষে মৃত বেড়ে ৮, দেশ ছেড়ে পালালেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে।Bangla News


একই সঙ্গে চিনের থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝাও দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। কারণ গচ্ছিত বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ই গত দু'বছরে ৭০ শতাংশ নেমে যায়। এ ছাড়াও, ২০২১ সালে কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন রাজাপক্ষ। পরে যদিও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, কিন্তু তত দিনে কৃষিকার্যে বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।  এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কোষাগারে ২৩১ কোটি ডলার ঋণের বোঝা ছিল। কিন্তু তাদের ঋণের বোঝাই ৪০০ কোটি ডলার। ইন্টারন্যাশনাল সভরেঁ বন্ডে ১০০ কোটি ডলারের ঋণের পাশাপাশি, এশিয়ান জেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, জাপান এবং চিনের থেকেও ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তা নিয়ে সময় থাকতেই বিপদের বার্তা শুনিয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার। ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে জানানো হয়।


রাজাপক্ষে সরকারের আমলেই বিপর্যয়


এ সব নিয়ে রাজাপক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। রাজাপক্ষে ভাইদের পদত্যাগের দাবি তোলেন তাঁরা। সেই নিয়ে উত্তাল হয় কলম্বো-সহ দেশের সব প্রান্ত। বেশ কয়েক জায়গা থেকে বিক্ষিপ্ত হিংসার খবরও সামনে আসে। জলকামান দেগে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করে সে দেশের সরকার। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি, ৩৬ ঘণ্টার কার্ফুও জারি করা হয়। তার পরেও বিক্ষোভ না থামেনি যদিও। তবে সোমবার রাজাপক্ষে সমর্থকরা সরকারি বিরোধী শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালানোর পর থেকেই নতুন করে তেতে ওঠে পরিস্থিতি।  বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করলে সোমবার পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আট। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পদত্যাগ করেন মহিন্দা রাজাপক্ষে। তবে তাতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং হাম্বানতোতায় তাঁদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, ওই বাড়িতে রাজাপক্ষে সমর্থকদের কয়েক জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।