আজমান (সংযুক্ত আরব আমিরশাহী): শ্রীদেবীর অন্ত্যেষ্টিতে যখন গোটা মুম্বই রাস্তায় নেমে এসেছে, তখন সেখান থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে দুবাইয়ে বসে কোথাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এক ভারতীয়।
ভারতে ক্যামেরার ফ্ল্যাশবাল্বের আড়ালে এবং তাঁর অগনিত ভক্তের নজর এড়িয়ে শ্রীদেবীর নিথর দেহ যখন নিঃশব্দে পৌঁছেছিল দুবাইয়ের একটি সাধারণ মর্গে, তখন কেউ জানতেন না, আদৌ তাঁর পার্থিব শরীর দেশে ফিরবে কি না। যদিও শেষমেশ তা সম্ভব হল এক ভারতীয়র উদ্যোগে। তাঁর স্বাক্ষরেই অভিনেত্রীর দেহ হাতে পান পরিবারের লোকজন।
শ্রীদেবীর রিলিজ পেপারে স্বাক্ষর রয়েছে মর্গের কর্মী আশরাফের। পুরো নাম আশরাফ "শেরি" থামারাশেরি। ৪৪ বছরের আশরাফ আদতে কেরলের বাসিন্দা। দুবাইতে কোনও ভিনদেশি মারা গেল, তাঁদের স্বদেশে ফেরানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক হলেন তিনি। তা সে ঋণগ্রস্ত শ্রমিক হোন বা ধনী সেলিব্রিটি—এখনও পর্যন্ত ৩৮টি দেশে মোট ৪,৭০০ বডি দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন শেরি।
শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর তাঁর পোস্টমর্টেম ও ফরেন্সিক পরীক্ষা নিয়ে যে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলেছে, তা স্বাভাবিক বলেই মনে করেন তিনি। বলেন, দুবাই হোক বা শারজা, নিয়ম সবজায়গায় এক। ধনী হোক বা গরিব—এখানে সকলেই এক।
আশরাফ জানান, পুলিশের ক্লিয়ারেন্স আসতে দেরি হওয়ার জন্যই শ্রীদেবীর দেহ ছাড়তে দেরি হয়। সেই ক্লিয়ারেন্স আসতেই তিনি সময় নষ্ট না করে ধূলোয় ঘেরা স্কোয়াট অঞ্চলের একটি সাধারণ মর্গে গিয়ে অভিনেত্রীর দেহে এমবামমেন্ট (দেহে পচন রোধে রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ) করান। তারপর সেখান থেকে দেহ চলে যায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে।
নিজের পেশার প্রতি কোনও মনে কোনও উষ্মা নেই শেরির। উল্টে তিনি এই কাজকে বড় দায়িত্ব হিসেবেই দেখেন। বললেন, এখানে কেউ মারা গেলে, পরিবার-পরিজনরা বুঝতে পারেন না, দেহ ফেরত নিয়ে যাবেন কীভাবে। আমি তাঁদের সাহায্য করি।
দুবাইয়ের অদূরেই পরিবার নিয়ে এক কামরার বেডরুমে থাকেন আশরাফ। একটি মেকানিক দোকান চালান। পাশাপাশি এধরনের সেবামূলক কাজ করেন। ঘরের দেওয়ালে অনেক সম্মান ও পুরস্কার টাঙানো রয়েছে। তারই মাঝখানে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর ছবি।