টোকিও: উৎসবের নাম হাদাকা মাতসুরি। বা নগ্ন পুরুষদের উৎসব। স্রেফ একফালি ন্যাকড়ায় যতটুকু না হলে নয়, ততটুকুই লজ্জা নিবারণ করে হাজারো জাপানি পুরুষ এদিন বরফ ঠান্ডা জলে স্নান সারেন। শনিবার রাতে পশ্চিম জাপানের ওকায়ামার সাইদাইজি মন্দিরে হয়ে গেল এই উৎসব। পুরোহিতের ছোঁড়া লাকি চার্ম পাকড়াতে জলের মধ্যে অসংখ্য লোকের হুড়োহুড়ি।

এক আধদিনের নয়, এই উৎসব অন্তত ৫০০ বছরের পুরনো। হাজারদশেক মানুষ ধর্মীয় এই অনুষ্ঠান পালন করেন কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করে। তবে বিষয়টা স্রেফ ঠান্ডা জলে স্নান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ষোল আনা। তাই পরনের ন্যাকড়ায় নিজের রক্তের গ্রুপ লিখে জলে লাফাতে হয়। আচমকা আহত হলে যাতে রক্ত নিয়ে অন্তত কোনও সমস্যা না হয়।

হাদাকা মাতসুরিতে যাঁরা যোগ দেন, তাঁরা পুরো অক্ষত শরীরে বেরিয়ে এসেছেন এমন নিদর্শন অবশ্য খুব বেশি নেই। ঠেলাঠেলিতে কপাল ফুলে যাওয়া, হাত পা ছড়ে যাওয়া তো সামান্য ঘটনা। আগে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুও হয়েছে বহু। কিন্তু দেড় ইঞ্চি ব্যাস আর আট ইঞ্চি লম্বা ওই পবিত্র লাঠি ধরতে প্রাণসংশয় করতেও পিছপা নন মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস, পুরোহিতের ছুঁড়ে দেওয়া ওই লাঠি যে পাকড়াও করবে, তার ভাগ্য খুলে যাবে।

অতএব? সাইদাইজি মন্দিরের বন্ধ ঘরে অপরিসর জায়গায় প্রচণ্ড গরমে ঘেমে নেয়ে যাওয়া হাজারদশেক মানুষ জলে ঝাঁপান পবিত্র ব্যাটনের সন্ধানে। আচমকা নিভে যায় আলো, ম্দিরের ওপর থেকে পুরোহিতরা শুরু করেন রহস্যময় মন্ত্রপাঠ। ওপর থেকে ঢেলে দেওয়া হয় পবিত্র জল। ভিড়ের চোটে শ্বাসরোধ হয়ে আসা বদ্ধ ঘরে বরফঠান্ডা জলের মধ্যে লাফিয়ে ওঠেন অসংখ্য প্রায় নগ্ন মানুষ। আকাশ থেকে ছিটকে পড়া লাঠি ধরতে অন্ধকারেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি। হাতে পেয়েই নিস্তার নেই, একসঙ্গে যুঝতে হবে অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে, সৌভাগ্যের আশায় যাঁরা চেষ্টা করছেন লাঠিটি কেড়ে নেওয়ার।

প্রাচীন জাপানিরা বিশ্বাস করতেন, যে ওই লাঠি শেষ পর্যন্ত নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন, তাঁর ক্ষেত শস্যে ভরে যাবে। যন্ত্রণা ভুলতে অনেকে নেশা করে যোগ দিতে আসতেন উৎসবে। তা অবশ্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এখন আর আগের মত শস্যের সম্ভাবনা নিয়ে মানুষ উৎসাহী নন। এক যুবক যেমন এই এপ্রিলেই বাবা হবেন। হাতে লাঠি নিয়ে একগাল হেসে তিনি বললেন, ঈশ্বর উপহার পাঠিয়েছেন, এবার নিশ্চয়ই গোলগাল, সুস্থসবল বাচ্চা হবে।