নাকু’আলোফা: সমুদ্রের নীচে আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ (Underwater Volcano Explosion)। তার জেরে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় (Pacific Ocean) দ্বীপপুঞ্জ টঙ্গায় (Tonga)। ছাইয়ে কার্যত ঢেকে গিয়েছে রাজধানী নাকু’আলোফা। একাধিক এলাকায় আছড়ে পড়েছে সুনামির ঢেউ। তাতে গির্জা থেকে বসতি, ভেসে গিয়েছে সবকিছু। বিপর্যয়ের পর থেকেই বাকি দুনিয়ার থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন টঙ্গা। তাই ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য এসে পৌঁছয়নি। তবে ১৯৯১ সালে ফিলিপিন্সের বিপর্যয়ের পর থেকে আগ্নেয়গিরি থেকে এত বড় বিপর্যয় আগে দেখা যায়নি বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

  


গত কয়েক দিন ধরে একটানা বৃষ্টি এবং বজ্রপাতের পর শনিবার সমুদ্র গর্ভস্থ ফনুআফো’উ আগ্নেয়গিরিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে কেঁপে ওঠে টঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ। ছাইয়ের বৃষ্টিতে ছেয়ে যায় রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকা। একই সঙ্গে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূল এলাকাকায়। তাতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর সব জলমগ্ন হয়ে পড়ে। নেটমাধ্যমে তার বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সামনে এসেছে। তবে সরকারি ভাবে টঙ্গার সঙ্গে স্থানীয় সময় রবিবার পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি।



এ দিকে, টঙ্গার অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব পড়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্যান্য দেশগুলিতেও। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পায় পেরু, এবং আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে। নিউজিল্যান্ডের তরফে আকাশপথে নজরদারি চালাতে গেলে, তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং ছাইয়ের কুণ্ডলী। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জসিন্ডা আর্ডেন জানান, ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টঙ্গা। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায়  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে টঙ্গায় জল এবং খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।



এখনও পর্যন্ত কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা যে ভিডিয়ো এবং ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ছত্রাকের আকারে সমুদ্রের বুক ফুঁড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠে আসছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার উপরে ধোঁয়া, ছাঁই এবং গ্যাসের কুণ্ডলী উঠে আসে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। টঙ্গা থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আলাস্কাতেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণের ফলে টঙ্গায় ৫.৮ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয়েছে বলে দাবি  মার্কিন আবহবিদদের।


পলিনেশিয়ার অন্তর্গত টঙ্গায় রাজতন্ত্র কায়েম রয়েছে আজও। মোট ১৬৯টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই দেশ। তবে এর মধ্যে মাত্র ৩৬টি দেশই জনবসতি রয়েছে। অগ্ন্যুৎপাতের জেরে আগেও বিপর্যয় নেমে এসেছে সেখানে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, টঙ্গার মতোই সমুদ্রের নীচে বহু আগ্নেয়গিরি রয়েছে। টেকটোনিক প্লেট সংলগ্ন অঞ্চলেও এমন আগ্নেয়গিরি রয়েছে। তা থেকে লাভা নিঃসরণের পাশাপাশি ছাইয়ের নির্গমনও ঘটে। তবে টঙ্গায় সুনামির যে ঢেউ আছড়ে পড়েছে, তা ভূমিকম্প নয়, আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণেরই ফল বলে মনে করছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা।