ঢাকা: গত ২৭ জুন অসমের বিধ্বংসী বন্যায় দল থেকে হারিয়ে গিয়েছিল হাতিটি। পরে ব্রহ্মপুত্রের জলে ভেসে গিয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু জল থেকে বাঁচলেও শেষরক্ষা হল না। গতকাল তার মৃত্যু হল। ময়নাতদন্তের পর চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, অসহ্য গরমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই হাতি বঙ্গবাহাদুরের মৃত্যু হয়েছে।


গতকাল জামালপুর জেলার কোয়রা গ্রামে হাতিটির মৃত্যু হয়। সরিষাবাড়ি উপজেলার চিফ এক্সিকিউটিভ ৪ টন ওজনের বঙ্গবাহাদুরের ময়নাতদন্তের জন্য ভেটার্নারি সার্জেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেন। ময়নাতদন্তের পর রহমান জানিয়েছেন, অসহ্য গরমেই হার্ট ফেল করে বঙ্গবাহাদুরের।

গতকাল সন্ধায় কোয়রা গ্রামেই হাতিটিতে কবর দেওয়া হয়।

ব্রহ্মপুত্রে ভেসে আসার পর বঙ্গবাহাদুরকে প্রচুর চেষ্টার পর উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন বনরক্ষক তপন কুমার দে। তিনি বলেছেন, হাতিটিকে উদ্ধার এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা করেছিলাম। ওর মৃত্যুতে আমরা ব্যথিত।

অসম থেকে ব্রহ্মপুত্রে ভেসে যাওয়ার পর বঙ্গবাহাদুর অনন্ত ১,৭০০ কিমি পথ অতিক্রম করে বলে মনে করা হচ্ছে। ছয় সপ্তাহের চেষ্টার পর অবশেষে গত ১১ আগস্ট তাকে উদ্ধার করা হয়। ভারত থেকে আসার পথে তাকে জলাজায়গাতেই থাকতে হয়েছিল। কেননা, ডাঙা তখন বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। তাই ডাঙাতে সে ওঠার চেষ্টা করেও সফল হয় নি।

এভাবে সে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে জামালপুরে পৌঁছয়। উদ্ধারের জন্য বঙ্গবাহাদুরের ওপর ঘুমপাড়ানি গুলি চালানো হয়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং প্রায় এক ঘন্টা সে এলোপাথাড়ি ছুটতে থাকে এবং শেষে সংজ্ঞাহীন হয়ে একটা খাদে পড়ে যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে বন দফতরের আধিকারিক ও গ্রামবাসীরা।

সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নিয়ে আসার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বঙ্গবাহাদুর।

গ্রামবাসীরা অবশ্য হৃদরোগের তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁদের অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, ঘুমপাড়ানি ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োদ করা হয়েছিল। আবার কারুর কারুর অভিযোগ, বঙ্গবাহাদুর যাতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রয়োজন মতো খাবার তাকে দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ জুলাই বঙ্গবাহাদুরকে উদ্ধারের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বনরক্ষকের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু তিনদিন  পরেই ওই দলের সদস্যরা দেশে ফেরত আসেন।