নয়াদিল্লি: রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটেনি এখনও পর্যন্ত। ইজরায়েল থেকে এখনও গাজ়ায় গোলাগুলি চলছে বলে খবর। সেই আবহেই পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল। কারণ এবার সিরিয়ায় রকেট বর্ষণ করল আমেরিকা। জঙ্গি সংগঠন ISIS-কে নিশানা করেই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করছে তারা। আমেরিকার দাবি, যুদ্ধ নয়, প্রতিশোধ তুলতেই রকেট বর্ষণ করা হয়েছে সিরিয়ায়। (US Strikes in Syria)
সিরিয়ায় ISIS-এর বিরুদ্ধে এই অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘Operation Hawkeye Strike’. ISIS-কে নির্মূল করতেই এই হামলা বলে জানিয়েছে আমেরিকা। গত সপ্তাহে পালমায়রায় আমেরিকার সেনাকে লক্ষ্য করে যে হামলা হয়, তাতে তিন জন মারা যান। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা বলে জানিয়েছে তারা। (OPERATION HAWKEYE STRIKE)
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘সকলের জ্ঞাতার্থে ঘোষণা করছি যে, যেমনটা কথা দিয়েছিলাম, খুনি জঙ্গিদের উপর গুরুতর আঘাত হানছে আমেরিকা’।
পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ সোশ্য়াল মিডিয়ায় লেখেন, ‘সিরিয়ায় ISIS যোদ্ধাদের নিকেশ করতে, তাদের পরিকাঠামো, অস্ত্রভাণ্ডার গুঁড়িয়ে দিতে আমেরিকার বাহিনী অপারেশন হকআই স্ট্রাইকের সূচনা করেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটানো হয়, তার পাল্টা আঘাত হল। এটা কোনও যুদ্ধের সূচনা নয়, প্রতিশোধের ঘোষণা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা নিজের দেশের নাগরিকদের রক্ষা করতে দ্বিধা করবে না’।
পৃথিবীর কোথাও, আমেরিকার নাগরিকদের উপর হামলে, কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না বলেও জানান পিট। তিনি লেখেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমেরিকার নাগরিকদের উপর হামলা হলে, বাকি যে ক’টা দিন হাতে থাকবে, উৎকণ্ঠায় কাটাতে হবে। বুঝতে হবে, আমেরিকা ঠিক খুঁজে বের করবে এবং নির্দয় ভাবে হত্যা করবে। আজ শত্রুদের খুঁজে বের করে নিকেশ করেছি আমরা, অনেককে। আগামী দিনেও এই কাজ করব’।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যমসূত্রে খবর, মধ্য সিরিয়ার একাধিক জায়গায় রকেট বর্ষণ করেছে আমেরিকা। ISIS-কে নিশানা করেই হামলা চাালানো হয়েছে। প্রায় ৭০টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে CNN.
গত সপ্তাহান্তে মধ্য সিরিয়ার পালমায়রায় আমেরিকা ও সিরিয়ার যৌথ বাহিনীর কনভয় লক্ষ্য করে হামলা চলে, যাতে আমেরিকার দুই সৈনিক এবং আমেরিকার সেনায় অনুবাদক হিসেবে কর্মরত, স্থানীয় এক নাগরিক মারা যান। পরে হামলাকারীকে গুলি করে মারা হয়। ওই হামলায় আমেরিকার তিন সৈনিক আহতও হন। আমেরিকার নিহত দুই সৈনিক আইওয়ার ‘হকআই স্টেটে’র বাসিন্দা বলে জানা যায়। সেই মর্মেই নামকরণ হয়েছে এই অভিযানের। চলতি বছরের শুরুতেই আইওয়া থেকে পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় ১৮০০ সেনা মোতায়েন করে আমেরিকার সরকার।
ISIS-কে নিশানা করে আমেরিকা F-15 Eagle যুদ্ধবিমান থেকে রকেট ছুড়েছে। পাশাপাশি, F-16 যুদ্ধবিমানও উড়িয়ে আনা হয় জর্ডান থেকে। HIMARS রকেটও ছোড়া হয়। সেই সঙ্গে A-10 এবং AH-64 অ্যাপাচে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয় হামলা চালাতে। তবে এখানেই শেষ নয়, আগামী কয়েক দিন পর পর বেশ কিছু হামলা চালানো হতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।
গত কয়েক মাসে ISIS-কে নিশানা করে সিরিয়ায় রকেট বর্ষণ করেছে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। এখনও সিরিয়ায় ১০০০ জন সৈনিক মোতায়েন রেখেছে আমেরিকা। গত সপ্তাহে যে হামলা হয়, তাতেে হামলাকারী ব্যক্তি সিরিয়ার নিরাপত্তাবাহিনীরই সদস্য, কিন্তু ISIS-পন্থী বলে জানায় সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক। সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নিজে প্রাক্তন ‘বিদ্রোহী’। ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলার পর গত বছর সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটে। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করায় একেবারে অগ্রভাগে ছিলেন আহমেদ।
আহমেদের নেতৃত্বে সিরিয়ায় বর্তমানে যে সরকার চলছে, তাতে দেশে ‘আল কায়দা’র প্রাক্তন কিছু সদস্য রয়েছেন। সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসে ISIS-এর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন তাঁরা। ISIS-এর বিরুদ্ধে আমেরিকাকে সহযোগিতা করছে আহমেদের সরকার। গত মাসে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখাও করেন আহমেদ।