রাজশাহী : চারিদিকে অশান্তি। প্রথমে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সহকারী হাই কমিশনে ঢুকে পড়ে উন্মত্ত জনতা। যাদের সরিয়ে দেয় বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী। এরপর ফের পশ্চিমের শহর রাজশাহীতে ইন্ডিয়ান মিশনের কাছে নতুন করে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এদিনই। গত সপ্তাহে ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির ওপর ভয়ঙ্কর হামলার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে রাস্তায় প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কাছে এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে সহকারী হাই কমিশনে দফায় দফায় প্রতিবাদ হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদির মৃত্যুর পর সেই প্রতিবাদ আরও তীব্র আকার নেয়। এরপর এদিন ইন্ডিয়ান মিশনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আঁচ। এ বিষয়ে অবগত মানুষজন বলছেন, সেখানে উত্তেজনা রয়েছে। তবে, সব ভারতীয় কূটনীতিক ও আধিকারিকরা নিরাপদ রয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে অবশ্য, বাংলাদেশ পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনী সময়মতো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার চট্টাগ্রামের ঘটনার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হয়।
বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যু ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতবিদ্বেষী বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। খুলনা ও রাজশাহীতে ভারতের ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকায় কর্মরত ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা। যদিও, খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকার ভিসা আবেদন কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ, ভারতীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনের উদ্দেশে রাজশাহীতে মিছিলে নামে 'ভারত-বিদ্বেষী' সংগঠন 'জুলাই ৩৬ মঞ্চ'। রাজশাহীর ভদ্রা মোড় থেকে মিছিল শুরু হলে, কিছুদূর এগোতে না এগোতেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ে মিছিল। প্রায় ১০০ মিটার পথ আগেই মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। সেখানেই অবস্থানে বসে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। খুলনাতেও একই ভাবে শুরু হয় বিক্ষোভ।
এদিকে শরিফ ওসমান হাদি খুনে শনিবার শোকদিবস পালনের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। ওইদিন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে বলে জানান তিনি। নির্বাচনের আগে কোটা আন্দোলনের নেতা ওসমান হাদি হত্যায় ফুটছে রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের একাধিক এলাকা। তিনি বলেন, 'শহিদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব নেবে সরকার।' ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে শনিবার এক দিনের 'জাতীয় শোক দিবস' পালন করা হবে বাংলাদেশে। এর পাশাপাশি 'এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে' বলে জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, 'হাদির মৃত্যু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিসরে এক অপূরণীয় ক্ষতি। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক ছিলেন হাদি।' এই আবহে দেশবাসীর উদ্দেশে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।