জয়ন্ত ঘোষাল, আনন্দবাজার পত্রিকা
‘সিটি অব মাদার, টিম বাংলা।’
বোর্ডে লেখা থাকবে এই শব্দগুচ্ছ। আর এই ‘টিম বাংলা’কে সঙ্গে নিয়েই কাল মা টেরিজার সন্ত হয়ে ওঠার অনুষ্ঠানে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাদার যেমন শাড়ি পরতেন, ঠিক তেমনই নীল পাড়, সাদা শাড়ি পরে। টিম বাংলা একসঙ্গে গান গাইতে গাইতে অনুষ্ঠানস্থলে যাবে, ‘বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু’।
মমতার কথায়, ‘‘আগেও নীল পাড়, সাদা শাড়ি পরতাম। নীল-সাদা রং আমার ভাল লাগে।’’ এখানে কাল বাঙালিয়ানারও ছাপ রাখতে চান তিনি। দলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বলেছেন, অনুষ্ঠানে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে আসতে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পায়জামা, পাঞ্জাবি পরবেন। সঙ্গে একটা নীল জ্যাকেট— বলে দিয়েছেন মমতা।
কালকের অনুষ্ঠানে ভিআইপি মঞ্চের একেবারে সামনের দিকেই বসার আসন নির্ধারিত রয়েছে মমতার জন্য। সেখানেই বসবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। কিন্তু মমতা ঠিক করেছেন, ওখানে বসবেন না। মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে বড় একটি টিম এসেছে, পিছনের সারিতে তাঁদের সঙ্গেই বসবেন তিনি, টিম বাংলার অঙ্গ হয়ে।
আজ সন্ধ্যায় রোমে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া নৈশভোজেও ছিলেন না মমতা। সকালে কেজরীবাল এসেছিলেন হোটেলে, মমতার সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় এক ঘণ্টা কথা হল দু’জনের। মমতা তখনই তাঁকে বলে দেন, ‘‘আপনি গেলে যান, আমি যাব না।’’ শেষ পর্যন্ত কেজরীবালও অবশ্য যাননি ওই নৈশভোজে।
আসলে এই সফরে ভারত সরকারের সংস্পর্শ কিঞ্চিৎ এড়িয়েই চলছেন মমতা। কলকাতা থেকে দুবাই হয়ে রোম এসেছেন তিনি। দুবাইয়ে দেখা হয়েছিল বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। সেখান থেকে বিমানে সুষমার পাশে বসেই মমতা রোমে এসেছেন। দু’জনের মধ্যে অনেক গল্প হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, সুষমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর হলেও কেন্দ্রের মতিগতিতে তিনি সন্তুষ্ট নন।
এখানে ভারত সরকারের ব্যবস্থা করা হোটেল দেখেও চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সুষমার জন্য যে স্যুইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তার দৈনিক খরচ দু’লক্ষ টাকা। অথচ গ্রান মিলিয়ে হোটেলে মমতার জন্য স্যুইট তো দূরস্থান, চিলতে এক টুকরো ঘর। সঙ্গে বাথরুম। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা পর্যন্ত পাননি। হোটেলে চা চাইতে গেলে বলা হয় ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। অসন্তুষ্ট মমতা বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়, চায়ের খোঁজে।
দার্জিলিংই হোক আর আগরতলা, মমতা যেখানেই যান, হাঁটতে শুরু করেন। পটনায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানই হোক বা ঢাকায় স্থলসীমান্ত চুক্তি করতে যাওয়া, হাঁটবেন তিনি হাঁটবেনই। রোমে এসেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোমান হয়ে যাননি। হোটেলের সামনে সার সার গাড়ি থাকলেও আজ হেঁটেই পৌঁছে যান কলোসিয়াম। কাল কোথায় কী অনুষ্ঠান হবে, সরেজমিন দেখেও এলেন এই ফাঁকে। সন্ধ্যাতেও পদব্রজে আর এক প্রস্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।
তারই ফাঁকে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছেন সিঙ্গুর নিয়ে। কখনও বা নিম্নচাপ নিয়ে। হোটেলের ঠিক পিছনেই এক রোমান মহিলা বালুচরী শাড়ির প্রদর্শনী করছেন। তাঁর নাম গাইয়া প্র্যানচেতি। পশ্চিমবঙ্গের খাদি বোর্ডের সঙ্গে ‘ফ্রিড’ নামে একটি সংস্থা জোট বেঁধে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। সংস্থার সচিব সোমনাথ পাইন বলেন, ‘‘আসলে অতীতে সিল্ক রুট দিয়ে মসলিন আসত ভারত থেকেই। তখন থেকেই এর প্রচলন।’’ বিকালে সেখানেও ঢুঁ দিল টিম বাংলা।
এ ভাবেই শহর যেটুকু দেখা যায়। অনেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদি বাসে করে দল বেঁধে প্রাচীন রোমের ধ্বংসাবশেষ, বিশেষ করে মসোলিয়াম ঘুরে দেখা যায়। মমতা রাজি হননি। সাইট সিয়িংয়ে বিশেষ আগ্রহী নন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার আসার কারণ একটাই। সেটা হল মাদার টেরিজা। মাদারের সন্ত হয়ে ওঠার অনুষ্ঠানে থাকব, এ জন্য ভাল লাগছে। এই অনুষ্ঠান থেকে মাদারের আদর্শকে মনে রেখে আমরা যে যার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাব। সেবার আদর্শকে সঙ্গে করে। আর্ত মানুষের সেবা করাই হোক আমাদের সবার উদ্দেশ্য।’’