নয়াদিল্লি: বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রত্যাবর্তন ঘটলেও, কিছুতেই বিতর্ক এড়াতে পারছেন না নীতীশ কুমার। সরকারি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর নকাব টেনে খুলে ফেলা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি। বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা ইতিমধ্যেই নিন্দায় সরব হয়েছেন। এবার মুখ খুললেন ‘দঙ্গল’ খ্যাত, একদা অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিমও। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন তিনি। (Nitish Kumar Hijab Row)
সম্প্রতি পটনায় আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট বিলি করছিলেন নীতীশ। এক তরুণী চিকিৎসক সার্টিফিকেট নিতে এলে মহিলাকে মুখের নকাব খুলতে ইশারা করেন। তবে ওই তরুণী কিছু বুঝে ওঠার আগে, নীতীশ নিজেই তাঁর নকাব টেনে খুলে দেন। তরুণী চিকিৎসকের মুখের অংশ অনাবৃত হয়ে যায়। গোটা ঘটনায় নীতীশের সহযোগীরা পর্যন্ত অস্বস্তিতে পড়ে যান। যদিও নীতীশ নির্বিকার ছিলেন। হাসি ধরে রেখেছিলেন মুখে। (Zaira Wasim)
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। সকলেই নীতীশের সমালোচনা করেন, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জায়রাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘নারীর মর্যাদা ও শালীনতা কোনও খেলনা নয় যে, তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে। প্রকাশ্যে তো একেবারেই নয়। মুসলিম নারী হিসেবে, অবলীলায় অন্য এক নারীর নকাব টেনে খুলে নিতে দেখে এবং তার পরও মুখে উদাসীন হাসি ধরে রাখা দেখে ক্ষুব্ধ আমি। ক্ষমতা কাউকে সীমা লঙ্ঘনের অধিকার দেয় না। নীতীশ কুমারের উচিত ওই মহিলার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া’। 'দঙ্গল', 'সিক্রেট সুপারস্টার'-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছনোর পরই অভিনয় থেকে সরে যান জায়রা। অভিনয়ের পেশা তাঁর ধর্মবিশ্বাসের উপর হস্তক্ষেপ করছে বলে জানান।
গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে নীতীশের সংযুক্ত জনতা দলও। তবে নীতীশের হয়ে সাফাই দিতে দেরি করেনি তারা। দলেরনেতা তথা বিহারের সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রী জামা খানের বক্তব্য, “মুসলিম কন্যার প্রতি স্নেহ ব্যক্ত করেছেন নীতীশ কুমার। সাফল্যের অধিকারী ওই কন্যার মুখ দেখতে চেয়েছিলেন। উনি মেয়েদের সর্বোচচ্ সম্মান দিয়েছেন। যাঁরা ওঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের মানসিকতাই বোঝা যাচ্ছে।”
বিরোধীরা যদিও ছেড়ে কথা বলছেন না। কংগ্রেসের বক্তব্য, “নির্লজ্জতা দেখুন শুধু। বিহার সরকারের সর্বোচ্চ পদে আসীন রয়েছেন যিনি, তিনি এমন নিন্দনীয় আচরণ করছেন। ভাবুন রাজ্যের মহিলারা তাহলে কতটা নিরাপদ। নীতীশ কুমারের উচিত, অবিলম্বে পদত্যাগ করা। এই আচরণের ক্ষমা হয় না।”
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মুখপাত্র এজাজ আহমেদ বলেন, “তরুণীর মুখের কাপড় টেনে খুলে দিয়ে নীতীশ কুমার বুঝিয়ে দিয়েছেন, নারীর ক্ষমতায়নের নামে বিজেপি এবং JD-U কী রাজনীতি করছে। মহিলার মুখাবরণ সরিয়ে নেওয়ার অর্থ তাঁকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত করা। অথচ ভারতীয় সংবিধান সকলকে ওই অধিকার দিয়েছে।”